বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামী মেজর
(অব.) নূর চৌধুরীকে
বাংলাদেশে ফেরত
পাঠাতে আবারো অস্বীকৃতি জানিয়েছেন কানাডার রাষ্ট্রদূত হিদার ক্রুডেন। ঢাকায় নিযুক্ত
কানাডার এই হাইকমিশনার গত ০৪ ডিসেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে
এ কথা জানান। এ সময় তিনি বলেন “আমাদের সরকারের নীতি খুব স্পষ্ট। কোনো ব্যক্তি তার
দেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হলে আমরা তাকে সেখানে ফেরত পাঠাই না”।
এ এইচ এম বি নূর চৌধুরী কানাডায় ২০০৭
সালে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে প্রাথমিক
আবেদন করলে প্রথমে তা প্রত্যাখান করা
হয়। পরবর্তীতে তিনি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল
করেছিলেন। এর আগে বঙ্গবন্ধুর এই খুনীকে ফেরত পাঠাতে দীপু
মনি বিগত ৫ অক্টোবর কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জন বেয়ার্ডকে চিঠি
পাঠিয়েছিলেন। এ
ছাড়া নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনার অংশ হিসেবে সম্প্রতি সরকার টরিস
এলএলপিকে নিয়োগ
দিয়েছে। টরন্টোভিত্তিক এই
আইনি পরামর্শক সংস্থা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কানাডার আদালতে আইনি লড়াই
করবে।
আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি অনুসারে এবং আন্তঃদেশীয় সম্প্রীতি
অক্ষুন্ন রাখতে কানাডা খুনি নূরকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দিতে পারে। আন্তর্জাতিক
আইনানুযায়ী বন্দি বিনিময় একটি স্বীকৃত নীতি। এমনকি কোন বন্দি বিনিময় চুক্তির
অনুপস্থিতিতে কেবলমাত্র স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পারস্পারিক সমঝোতার ভিত্তিতেও
বন্দি বিনিময় হতে পারে। ইতোপূর্বে বাংলাদেশের
সঙ্গে এবং বাংলাদেশও বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন সময় বন্দি বিনিময় চুক্তির
অনুপস্থিতিতেই বন্দি সন্ত্রাসীদের
বিনিময় করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে এ ব্যাপারে অনেক
অগ্রগতিও পরিলক্ষীত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক রীতি (Convention) অনুযায়ী দু’টি
দেশের মাঝে বন্দি বিনিময় চুক্তি (Extradition Treaty) বিদ্যমান থাকলে তারা নিজেদের মধ্যে বন্দি বিনিময় করতে বাধ্য। বহিঃসমর্পণ-সংক্রান্ত
১৯৩৩ সালের Montevideo Treaty-তে বলা হয়েছে, এ চুক্তি থাকলে
দুই দেশের মধ্যে বন্দিকে নিজ
দেশে
ফিরিয়ে নেওয়া বা বহিঃসমর্পণে বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। যে অপরাধের জন্য
বহিঃসমর্পণ চাওয়া হয় তা মারাত্মক ও গুরুতর এবং উভয় রাষ্ট্রে অপরাধ হতে হবে। নরহত্যা বাংলাদেশের আইনে যেমন
অপরাধ, কানাডার আইনেও
তা-ই। বাংলাদেশে
যেখানে
দণ্ডবিধিতে হত্যার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের
উল্লেখ রয়েছে, কানাডায় সেখানে ফৌজদারি অপরাধের জন্য
মৃত্যুদণ্ডের বিধান ১৯৭৬ সালে বাতিল করে কারাদণ্ডের
ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
তবে কানাডার স্থানীয়
আইনানুযায়ী এমন কোনো আসামীকে বহিঃসমর্পণ (Extradite) করা যাবে না, যে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে।
কানাডা এখন তাদের আভ্যন্তরীণ এই আইনি বিধানের
দোহাই দিয়ে নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে
সমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিধি-বিধানের প্রতি সম্মান
প্রদর্শন করে কানাডাকে খুনি-সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্য না বানিয়ে কেবলমাত্র ন্যায়
বিচার প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে কানাডা এ কাজে আমাদের সহযোগিতা করতে পারে।
এছাড়াও যদি নিগ্রহ (Persecution) থেকে রক্ষা পেতে
অন্য দেশে আশ্রয়প্রার্থনা ও তা ভোগ করার মানবাধিকারের
বিষয়টি (দেখুনঃ সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ১৪ অনুচ্ছেদ) আমলে নেয়া হয় তাহলে দেখা যায় শরণার্থীর মর্যাদাবিষয়ক জাতিসংঘ সনদ (১৯৫১ ও অতিরিক্ত চুক্তি (প্রটোকল) ১৯৬৭) অনুসারে
নিম্নোক্ত তিনটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে কোনো একজন
ব্যক্তি শরণার্থীর মর্যাদা পেতে পারেন:
১. জাতিগোষ্ঠী, ধর্ম, জাতীয়তা, নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠীর সদস্যপদ কিংবা রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে নিগ্রহের ভীতি থাকলে; ২. যিনি আগে থেকেই নিজ দেশের বাইরে অবস্থান করছেন এবং ৩. যিনি নিজ দেশের নিরাপত্তা পেতে অপারগ অথবা অনিচ্ছুক অথবা নিগ্রহজনিত ভীতির কারণে সংশ্লিষ্ট দেশে ফেরত যেতে চান না। নূর চৌধুরী বা বঙ্গবন্ধুর অন্য খুনিদের বেলায় এর কোনটিই প্রযোজ্য নয়।
১. জাতিগোষ্ঠী, ধর্ম, জাতীয়তা, নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠীর সদস্যপদ কিংবা রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে নিগ্রহের ভীতি থাকলে; ২. যিনি আগে থেকেই নিজ দেশের বাইরে অবস্থান করছেন এবং ৩. যিনি নিজ দেশের নিরাপত্তা পেতে অপারগ অথবা অনিচ্ছুক অথবা নিগ্রহজনিত ভীতির কারণে সংশ্লিষ্ট দেশে ফেরত যেতে চান না। নূর চৌধুরী বা বঙ্গবন্ধুর অন্য খুনিদের বেলায় এর কোনটিই প্রযোজ্য নয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার
শরণার্থীসংক্রান্ত
আইনে শরণার্থীর সংজ্ঞা ১৯৫১ সালের সনদেরই অনুরূপ। অধিকন্তু,
কানাডা ১৯৬৭ সালে ১৯৫১ সালের শরণার্থী সনদ অনুসমর্থন করায় তা তাদের ওপর বাধ্যকরি
এবং জাতীয় (দেশীয়) আইন দ্বারা এই আন্তর্জাতিক সনদের কোন বিধান রহিত করা যাবে না। তবে
কোনো ব্যক্তি
শরণার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন (এমনকি উপরোল্লিখিত কারণে নিগ্রহের ভীতি
থাকা সত্ত্বেও)-যদি তিনি শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ
অথবা মানবতার
বিরুদ্ধে অপরাধ (আন্তর্জাতিক আইনের বর্ণনামতে) করে থাকেন; আশ্রয়প্রার্থনার
দেশে আসার আগে যদি অন্যত্র গুরুতর অরাজনৈতিক (Serious
non-political) অপরাধ করে থাকেন; কিংবা তিনি যদি এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত
থেকে থাকেন, যা জাতিসংঘের
উদ্দেশ্য ও নীতির বিরুদ্ধে যায় (দেখুনঃ শরণার্থীসংক্রান্ত সনদের ১ (এফ) অনুচ্ছেদ)। যেহেতু মেজর
(অব.) নূরসহ
অন্যান্য খুনিরা (যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে) খুনের দায়ে উপযুক্ত আদালত থেকে দণ্ডপ্রাপ্ত তাই এই আইনের আওতায় তারা কোনরূপ
সুরক্ষাতো পাবেই না এমনকি নিজেদের শরণার্থী দাবি করেও আশ্রয় চাইতে পারবে না।
অন্যদিকে লাতিন আমেরিকার নীতিনুযায়ী
কোনো রাষ্ট্র যদি
কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বহিঃসমর্পণ না করে, তবে
সেই রাষ্ট্রকে
রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে তার বিচার করার
বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা দেখতে পারছি
কানাডা একটি দেশের আইনানুযায়ী সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত (আপিলের সুযোগসহ) কোন
আসামীর বিচারতো তাদের দেশে করছেই না উপরন্তু তার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছে। এ
ধরনের খারাপ নজির প্রতিষ্ঠিত হতে
থাকলে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের এই দুনিয়ায় সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মাত্রায় রাজনৈতিক
আশ্রয় চাইতে উৎসাহিত হবে এবং সন্ত্রাসের রাশ টেনে ধরতে এই সকল রাষ্ট্রকেই তখন বেগ
পেতে হবে। এমনকি এই অনৈতিক
আশ্রয়প্রাপ্তরা তাদের জন্যই হুমকি হয়েও আবির্ভূত হলে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না।
তাই সামগ্রিক বিবেচনায়ও কানাডার স্বীকৃত দণ্ডপ্রাপ্তদের আশ্রয় প্রদান করা সমীচীন
হবে না।
১৯৭৫-এর হত্যাযজ্ঞকে কানাডা বা অন্য কোন পরাক্রমশালী রাষ্ট্র
রাজনৈতিক হত্যা বলেও দায় এড়াতে পারে না। কারণ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের
স্থপতি ও জাতির পিতাকে
স্বপরিবারে রাতের আঁধারে নৃশংসভাবে হত্যা করাকে কেবল রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে
আখ্যায়িত করা যায় না। তাছাড়া সন্ত্রাসবাদের বেলায় বলা হয়ে থাকে ‘সন্ত্রাস একটি
ফৌজদারি অপরাধ, রাজনৈতিক অপরাধ নয়’ (দেখুনঃ
France vs UK, Q.B.D. 1894)।
১৯৮৮ সালে স্বাক্ষরিত
ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বহিঃসমর্পণ চুক্তি অনুযায়ী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশেষ করে রাষ্ট্রনায়কদের হত্যা রাজনৈতিক
অপরাধ হিসেবে গণ্য
করা হয় না। এই চুক্তিতে স্পষ্ট
করে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক হত্যাও
জঘন্যতম অপরাধ। তাই
এ অপরাধও বহিঃসমর্পণযোগ্য হিসেবে গণ্য হবে। শেখ মুজিব হত্যা মামলার অন্যতম আসামি
মেজর (অব.) বজলুল হুদাকে
থাইল্যান্ড থেকে বহিঃসমর্পণের জন্য বাংলাদেশ দাবি জানালে জনাব হুদার আইনজীবী বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে ‘রাজনৈতিক’ চিহ্নিত করে
বহিঃসমর্পণের
বিরুদ্ধে যুক্তি দেখান। থাইল্যান্ডের আদালত এক্ষেত্রে ‘হত্যা’কে
রাজনৈতিক হিসেবে
স্বীকৃতি না দিয়ে তাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশে বহিঃসমর্পণ করেছিল।
যদিও শরণার্থীর মর্যাদাবিষয়ক জাতিসংঘ সনদে নিগ্রহের কোনো সংজ্ঞা দেয়নি
তথাপি যুক্তরাষ্ট্রের
নবম সার্কিট কোর্ট ঘালি বনাম আইএনএস (১৯৯৫) মামলায় নিগ্রহের সংজ্ঞা দিয়েছে এভাবে-‘The infliction of suffering or harm
upon those who differ (in race, religion or political opinion) in a way
regarded as offensive.’
অর্থাৎ কাউকে যদি জাতিগোষ্ঠী, ধর্ম অথবা রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রভৃতির কারণে এমনভাবে যন্ত্রণা দেওয়া হয় কিংবা ভোগান্তির শিকার করা হয়, যা অনভিপ্রেত বলে বিবেচিত হবে, তাই নিগ্রহ। এই নিগ্রহ স্বাভাবিকভাবে সমাজে অনভিপ্রেত বলে বিবেচিত আচরণের চেয়ে চরমতম।
অর্থাৎ কাউকে যদি জাতিগোষ্ঠী, ধর্ম অথবা রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রভৃতির কারণে এমনভাবে যন্ত্রণা দেওয়া হয় কিংবা ভোগান্তির শিকার করা হয়, যা অনভিপ্রেত বলে বিবেচিত হবে, তাই নিগ্রহ। এই নিগ্রহ স্বাভাবিকভাবে সমাজে অনভিপ্রেত বলে বিবেচিত আচরণের চেয়ে চরমতম।
কানাডার অভিবাসী ও শরণার্থী
সুরক্ষা আইন, ২০০১ অনুসারে কোনো ব্যক্তি শরণার্থীবিষয়ক জাতিসংঘ সনদের ১
(ই) ও (এফ) অনুচ্ছেদের বিধানমতে শরণার্থী হওয়ার অযোগ্য হলে কানাডার
আশ্রয়প্রার্থনার
ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে। এছাড়া এই আইনআনুসারে, মানবাধিকার তথা আন্তর্জাতিকভাবে
স্বীকৃত অধিকার লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া
ওপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
যদিও এই হত্যা মামলায় ইতোমধ্যে সৈয়দ ফারুক
রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন
আহমেদ ও মহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি
কার্যকর করা হয়েছে, তথাপি নূর চৌধুরী ও এম রাশেদ চৌধুরী
(যিনি
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন) ছাড়াও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
আসামি আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, আবদুল মাজেদ ও
মোসলেমউদ্দিন এখনো পলাতক রয়েছেন।
যে বিশ্বজনীন সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বর্তমান কানাডা, আমেরিকা কিংবা
ইংল্যান্ডের মাথাব্যাথা সেই সন্ত্রাসবাদের এমন নগ্ন প্রতিপালন তাদের মানায় না। আজ
যদি বাংলাদেশ তাদের কোন মহান অধিপতির
হত্যাকারীর আশ্রয়ক্ষেত্র হতো (যদিও চাইনা বিশ্বের কোন ভূ-খণ্ডই কোন দণ্ডপ্রাপ্ত
আসামীর অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র হোক) তাহলেতো মুহূর্তেই
বাংলাদেশর আফগানিস্স্তান, ইরাক অথবা লিবিয়ায় পরিণত বরণ করে নিতে হতো।
এখন কানাডা যেহেতু খুনি নূরকে সমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে তাই সরকারকে এ ব্যাপারে কৌশলী হতে হবে। আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে
সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে দু’রাস্ট্রের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। কানাডা বা
যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের সঙ্গে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যেসব বিষয় আছে সেখান থেকে কূটনৈতিক চাপে ফেলতে হবে।
প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা কামনা করা যেতে পারে।
তাতে কাজ না হলে জাতিসংঘ কিংবা আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যেতে পারে।
সরকারের আইনের শাসন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার
যে ব্রত তা সামনে নিয়া আসতে হবে। বৈশ্বিকভাবে প্রচারণা চালিয়া সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করতে হবে। অপরাধীদের অপরাধের ভয়াবহতা এবং নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে বিশ্বমহলকে
জ্ঞাত করতে হবে। দোষীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সাহায্য কামনা করা যেতে
পারে। এ ধরনের অযাচিত আশ্রয় প্রদানের ভবিষৎ ক্ষতিকর প্রভাব সম্বন্ধে বহিঃবিশ্বকে
সজাগ করতে হবে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলিকে বোঝাতে হবে যে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া
মেনে ও সুযোগ প্রদান করে তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে এবং বিচারিক প্রক্রিয়া
স্বচ্ছভাবে সম্পাদিত হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তরা কোনরূপ রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার হয়নি বরং আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে তাদের দণ্ড কার্যকর করা অত্যাবশ্যক। এমনকি দণ্ডপ্রাপ্তরা আইনি
বিধান সাপেক্ষে মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন, রিভিউ এবং রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা
চাওয়ার সুযোগ পাবে।
আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী কানাডা বাংলাদেশের নিকট খুনি নূর
চৌধুরীকে দিতে বাধ্য এবং তার বিচার
কার্যকর করার সুযোগ না দিলে তা আইনের লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে। এতগুলো যুক্তি সুচারুরূপে উপস্থাপন করার পরও কানাডা,
যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য রাষ্ট্রগুলিকে (যেসব রাষ্ট্রে দোষীরা পালিয়ে আছে) বন্দি
বিনিময়ের ব্যাপারে রাজি করানো না গেলে বন্দিদের অন্য
কোন তৃতীয় দেশে হস্তান্তরের প্রস্তাব দেয়া
যেতে পারে এবং সেখান থেকে তাদের বাংলাদেশে প্রত্যার্পন করানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তাতেও
কাজ না হলে দোষীদের বিরুদ্ধে অন্যকোন অভিযোগ থাকলে (যে অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
নয়) তার বিচার করে সে বিচারের রায় কার্যকর করার উদ্দেশ্যে
তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে বঙ্গবন্ধু হত্যা
মামলার রায়ও কার্যকর করা যেতে পারে।
No comments:
Post a Comment