Saturday, January 21, 2012

এজাহার দায়ের করবেন যেভাবে


ঘটনা ১- রংপুরের রফিকুল ইসলাম তার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ভোরে ঢাকার গাবতলী পৌঁছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। তিন-চারজন ছিনতাইকারী মুহূর্তেই তাদের সর্বস্ব লুট করে নেয় এবং যাওয়ার সময় তার ভাইকে ছুরিকাঘাত করে যায়। ভাইয়ের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রফিকুল ইসলাম যখন পার্শ্ববর্তী থানায় মামলা করতে যান তখন থানা থেকে জানানো হয় মামলা দায়ের করতে হলে ঘটনার বিবরণসহ লিখিত অভিযোগ দাখিল করতে হবে।  রফিকুল ইসলাম দুশ্চিন্তায় পড়ে যান, কারণ তিনি পড়ালেখা জানেননা এবং আইনের এত মারপ্যাঁচও বোঝেননা। তখন থানায় উপস্থিত দালাল তাকে দুই হাজার টাকার বিনিময়ে এজাহার লিখে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। উপায়ন্ত না দেখে রফিকুল তাতেই রাজি হয়ে যান।

ঘটনা ২- সাতক্ষীরার সিরাজউদ্দিন তার মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে প্রতিবেশী বখাটে যুবক আসলাম মিয়াকে প্রধান আসামী করে সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার দায়ের করেছিলেন। কিন্তু মামলার এজাহারের দুর্বলতা, বিলম্ব ও পর্যাপ্ত সাক্ষীর অভাবে তার মেয়ের হত্যাকারীরা নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে এখন তারই সামনে দিয়ে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ায়। 

শুধু রংপুরের রফিকুল ইসলাম কিংবা সাতক্ষীরার সিরাজউদ্দিন নয়, ঠিকমতো এজাহার দায়ের করতে না পারায় প্রতিনিয়ত অনেকেই বিচার পাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে এজাহার দায়েরের মাধ্যমে অধিকাংশ মামলার সূচনা হয়। তাই পরবর্তীতে মামলার গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে এজাহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে পরিগণিত হয়। কিন্তু ঠিকঠাকমতো এজাহার রুজু করার জন্য পর্যাপ্ত আইনি জ্ঞান ও দক্ষতা না থাকায় প্রায়ই আমাদের রফিকুল ইসলাম/সিরাজউদ্দিনের মতো পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। তাছাড়া আইনগতভাবে এজাহার লেখার পদ্ধতিও যথেষ্ট জটিল।

এজাহার কীঃ অপরাধী ও সংঘটিত আমলযোগ্য অপরাধ বিস্তারিত বিবরণসহ শাস্তি দাবী করে বা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে থানায় অপরাধের সংবাদ লিপিবদ্ধ করাকে এজাহার বলে। যা FIR (First Information Report) বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণী নামেও পরিচিত। অপরাধ সম্বন্ধে এ বিবরণ প্রথম দেয়া হয় বলে একে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বলে। আমলযোগ্য অপরাধ (Cognizable offence) হচ্ছে সেই অপরাধ যে অপরাধের দরুণ অভিযুক্তকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যায়।

এজাহার লিখিত বা মৌখিক যেকোনভাবেই করা যেতে পারে। মৌখিক এজাহারের ক্ষেত্রে থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বিনামূল্যে ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ করে দিবেন এবং উক্ত ঘটনার বিবরণ তিনি তথ্য প্রদানকারীকে পড়ে শুনিয়ে আপত্তি না থাকলে তাতে তার স্বাক্ষর নিবেন। আর যদি তথ্য প্রদানকারী কোন সংশোধন আনতে চান তবে তা আনার পর স্বাক্ষর নিবেন। অন্যদিকে লিখিত এজাহারের বেলায় সংঘটিত অপরাধের বিস্তারিত বিবরণ স্বাক্ষরসহ দরখাস্ত আকারে সংশ্লিষ্ট থানায় দাখিল করতে হয়। প্রাপ্ত দরখাস্তের তথ্যাদি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এজাহারের জন্য নির্ধারিত বিপি ২৭ ফরমে তুলে মামলার জন্য প্রয়োজনীয় পরবর্তী পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করেন।  তবে কোন কারণে থানা এজাহার নিতে না চাইলে সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে নালিশি ( Complaint Register) মামলা রুজু করা যায়।

১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় এজাহার সম্পর্কে বলা হয়েছে - কোন থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারের (OC) নিকট কোন আমলযোগ্য অপরাধ সংঘঠিত হওয়া সম্পর্কে কোন সংবাদ মৌখিকভাবে প্রদান করা হলে তিনি বা তার নির্দেশক্রমে অন্য কেউ সাথে সাথে তা লিখে তথ্য প্রদানকারীকে পড়ে শুনাবেন এবং তথ্য প্রদানকারীর স্বাক্ষর নিবেন লিখিতভাবে প্রদত্ত সংবাদের ক্ষেত্রেও তথ্য প্রদানকারী  স্বাক্ষর করবেন এই তথ্য বিবরণী উক্ত অফিসার সরকার  কর্তৃক নির্দেশিত (বিপি ২৭) ফরমে লিপিবদ্ধ করবেন

তবে অপরাধের সংবাদটি বিস্তারিত না হলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে এবং পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী বাহিনী ঘটনা আমলে নিয়ে তদন্ত করতে পারবে। যেকোন ব্যক্তিই অপরাধ সংঘটন স্থলের নিকটবর্তী থানায় এজাহার রুজু করতে পারেন। এর জন্য তাকে ক্ষতিগ্রস্থ হবার প্রয়োজন নেই। তবে  আমলঅযোগ্য অপরাধের ঘটনা তদন্ত করতে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের পূর্বানুমতির প্রয়োজন পড়ে (দেখুনঃ রাষ্ট্র বনাম আবদুল গফফার মুন্সী এবং অন্যান্য, ৩৫ তম ঢাকা ল রিপোর্টের ৭৬ পৃষ্ঠা) ।

এজাহারে যেসব বিষয় উল্লেখ করতে হয়ঃ ঠিকমতো এজাহার করতে না পারায় অনেকেই বাধ্য হয়ে টাকার বিনিময়ে দালালের সাহায্য নেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী না হওয়ায় এজাহারে এ সকল দালালেরা ঘটনার প্রকৃত বিবরণ তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়। ফলস্বরূপ এজাহার দুর্বল হয়ে যায় এবং আসামির বিপক্ষে মামলা প্রমান করা কঠিন হয়ে পড়ে। এজাহার হলো ফৌজদারী মামলার ভিত্তি, তাই এজাহারে অপরাধী ও অপরাধের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ সতর্কতার সঙ্গে তুলে ধরতে হয়। এজাহারে তাই (১) সুস্পষ্টভাবে অপরাধীর নাম ও ঠিকানা (জানা থাকলে) উল্লেখ করা; (২) অপরাধের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা যৌক্তিকভাবে লিপিবদ্ধ করা; (৩) অপরাধ সংঘ্টনের তারিখ ও সময় উল্লেখ করা; (৪) অপরাধের সংঘটনস্থল উল্লেখ করা; (৫) অপরাধ সংঘটনের কোন পূর্ব সূত্র বা কারণ থেকে থাকলে তার বর্ণনা তুলে ধরা; (৬) সন্ধিগ্ধ ব্যক্তিদের সম্পর্কে ধারণা দেয়া; (৭) অপরাধ পরবর্তী অবস্থা যেমন -সাক্ষীদের আগমন, আহত ব্যক্তির চিকিত্‍সা ইত্যাদি সম্পর্কে বর্ণনা; (৮) সাক্ষীদের নাম, ঠিকানা ইত্যাদি উল্লেখ করা; (৯) অপরাধীদের কে বাধা দিয়ে থাকলে তার ধারাবাহিক বর্ণনা করা; (১০) কোন বিষয় তাত্‍ক্ষনিকভাবে লেখা সম্ভব না হলে পরবর্তীতে সে বিষয়টি সংযোজন করা হবে এমন একটি কৈফিয়ত রাখা প্রভৃতি বিষয়াবলী উল্লেখ করা জরুরি। এছাড়া এজাহার দাখিলে কোন কারণে বিলম্ব হলে যথাযথ ও যৌক্তিক কারণ দর্শানো এবং কোন ঘষা-মাজা, কাটা-কাটি করা না থাকা ভাল। যদিও ফৌজদারী অপরাধের কোন তামাদি নেই, তথাপি এজাহার দায়েরে বিলম্ব মামলার গুনগতমান বিনষ্ট করে।
এজাহারের ৫টি কপি করতে হয়, তন্মধ্যে মূল কপি কোর্টে, প্রথম কার্বন কপি পুলিশ সুপার এর নিকট, দ্বিতীয় কার্বন কপি থানায়, সাদা কাগজে অতিরিক্ত কপি সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপারের নিকট এবং  সাদা কাগজে অতিরিক্ত কপি এজাহারদাতার নিকট প্রেরণ করতে হয়।
এজাহার রুজুর পর পুলিশি দায়িত্বঃ পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি), ১৯৪৩ এর ২৪৩, ২৪৩(চ)২৪৫ প্রবিধান এবং ফৌজদারী কার্যবিধির, ১৮৯৮ ১৫৪ ধারানুযায়ীঃ আমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ শুনে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার FIR গ্রহণ হতে বিরত থাকতে পারবেন না এজাহার হলো জিআর (General register) বা পুলিশি মামলার মূল ভিত্তি তাই আমলাযোগ্য কোন অপরাধের সংবাদ পাবার সাথে সাথে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৭ ধারানুসারে তদন্ত আরম্ভ করতে হবে সংবাদাতা সংবাদটি লিখিতভাবে দিতে না চাইলে অথবা তা লেখা হলে তাতে স্বাক্ষর দিতে না চাইলে সংবাদটি জিডিভক্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে প্রাথমিক তথ্যদাতা  টেলিফোন/ফ্যাক্স/ইমেইল বা যোগাযোগের অন্যকোন মাধ্যম ব্যবহার করে এমনকি সংবাদপত্রের মাধ্যমে অবগত হয়ে কোন আমলযোগ্য অপরাধের  সংবাদ দিলে সংবাদদাতাকে থানায় এসে এজাহার রুজুর জন্য বলতে হবে এবং তার নাম, ঠিকানা, খবরের উৎস প্রভৃতি লিপিবদ্ধ করতে হবে, সংবাদদাতা থানায় না এলে সংবাদ গ্রহণকারী অফিসার নিজেই বিষয়টি FIR করে ব্যবস্থা নিবেন (ধারা-১৬৭) অপরাধ সংঘটনের সংবাদটি কোন আমলযোগ্য ঘটনার না হলে সেটি জিডি হিসেবে এন্টি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে সংবাদদাতা স্বাক্ষর না দেবার কারণে প্রয়োজনীয়  কার্যক্রম বন্ধ রাখা যাবে না সংবাদ পেলে ডাক্তারী কিংবা অন্যকোন প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট না পাওয়ার কারণে এজাহার বিলম্বিত করা যাবে না। ম্যাজিস্ট্রট আমলযোগ্য কোন অপরধা তদন্ত করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিলে ম্যাজিস্ট্রেটের প্রেরিত লিখিত বার্তাই পুলিশ কর্মকর্তা এজাহার রূপে গণ্য করে পদক্ষেপ নিবেন (দেখুনঃ ৪৭তম ঢাকা ল রিপোর্টের ৯৪ পৃষ্ঠা)
এজাহারের সাক্ষ্য মূল্যঃ এজাহার হলো মামলার প্রারম্ভিক দলিল। এজাহার যেহেতু কোন অপরাধ সংঘটনের পর পরই দায়ের করা হয়, তাই এজাহার হলো সংঘটিত অপরাধের একটি বাস্তব চিত্র তাছাড়া এজাহারের ওপর ভিত্তি করেই মামলার তদন্ত কাজ প্রাথমিকভাবে পরিচালিত হয়। টি যেকোন মামলার প্রধানতম লিখিত দালিলিক সাক্ষ্য আর এ কারণেই মৌলিক সাক্ষ্য না হয়েও ফৌজদারী মামলায় এজাহারের গুরুত্ব অপরিসীম। এজাহারদাতা এবং এজাহারগ্রহিতার (সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার) মধ্যে অন্তত একজনকে মামলার সাক্ষ্য পর্বে আদালতে এসে সাক্ষ্য দিয়ে তা প্রমাণ করতে হয় অন্যথায় মামলা দুর্বল হয়ে যায়
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১৪৫ ধারানুসারে এজাহারকে সাক্ষীর সাক্ষ্যের সত্যতা কিংবা অসংগতি প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা যা। অধিকন্তু, এজাহারের বক্তব্যের সঙ্গে সাক্ষ্য পর্যায়ে এজাহারকারী/গ্রহিতার বক্তব্যে অসংগতি ধরা পড়লে অপরাধ প্রমান করা কঠিন হয়ে পড়ে। অপরাধের ধরণ ও অপরাধীদের আচরণ এজাহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাহলেও মামলার ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
জিডি ও এজাহারের পার্থক্যঃ জিডি করা হয় অপরাধ সংঘটনের আশংকা থেকে, অপরদিকে এজাহার করতে হয় অপরাধ সংঘটনের পরপর। এজাহার কেবলমাত্র আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রেই দায়ের করা যায়, কিন্তু জিডি যেকোন অপরাধ এমনকি কোন কিছু হারিয়ে গেলেও করা যায়।
শেষ কথাঃ ফৌজদারী মামলার বিচারে এজাহার অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই বিচারকালে এজাহারে কোন ত্রুটি ধরা পড়লে তা আর সাধারণত সংশোধন করা যায়না। এজাহারের ওপর মামলার ভাগ্য অনেকখানি নির্ভর করে। একটি শক্তিশালী এবং নিরেট এজাহার একদিকে যেমন আইনের শত ব্যাখ্যার মধ্যেও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে পারে অন্যদিকে ঠিক তেমনি দুর্বল ও অসঙ্গতিপূর্ণ এজাহার মামলার গুনগত মান নষ্ট করে বিচার বিলম্বিত করে আসামীদের জন্য বেকসুর খালাসের ব্যবস্থা করতে পারে। তাই এজাহার দায়ের করার পূর্বে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি এ বিষয়ে পুলিশের জন্য প্রশিক্ষণ ও বর্তমান প্রক্রিয়াটি সংশোধন করে এজাহারের জন্য জনবান্ধব ছক প্রবর্তন করাও অত্যাবশ্যক। তাহলে অন্তত প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে আর কোন রফিকুল ইসলাম কিংবা সিরাজউদ্দিনকে বিচার বঞ্চিত হয়ে চোখের জল ফেলতে হবে না।
২২-০১-২০১২ তারিখের প্রথম আলোর আইন অধিকার পাতায় প্রকাশি।

Tuesday, January 10, 2012

টিআইএন পেতে ভোগান্তি যত

আকবর হোসেন মিরপুরের বাসিন্দা। এসেছিলেন ঢাকার কর অঞ্চল-৮-এর অফিস ৭৪ সেগুনবাগিচায়। ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য টিআইএন নম্বর নিতে এসেছেন তিনি। মিরপুরের বাসিন্দা হয়েও এখানে টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) করাতে এসেছেন কেন, জানতে চাইলে তিনি জানালেন বিষয়টি তাঁর নির্দিষ্ট করে জানা ছিল না। এই অফিস থেকেও এ নিয়ে তাকে কিছু জানানো হয়নি।
প্রত্যেক করদাতারই একটি করে আলাদা টিআইএন নম্বর থাকে। কর দেওয়া ছাড়াও নানা ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ও দৈনন্দিন কাজ সম্পাদনে টিআইএন নম্বরের প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেমন—অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করতে, ট্রেড লাইসেন্স, ক্রেডিট কার্ড পেতে, গাড়ি কিনতে ইত্যাদি।
এসব কারণেই সাধারণ মানুষকে টিআইএন নম্বর জোগাড় করতে প্রতিনিয়ত কর অঞ্চল অফিসে ধরনা দিতে হয়। করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর পেতে হলে যে ব্যক্তি যে এলাকার বাসিন্দা, তাঁকে এলাকা অনুযায়ী নির্ধারিত কর সার্কেলে ডেপুটি কমিশনার বরাবর টিআইএনের জন্য আবেদন করতে হবে। এই কর সার্কেলের ঠিকানা এবং কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জানা থাকেনা অনেকের। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণকে ।
এলাকা অনুযায়ী ঠিকানামতো যেতে না পেরে অনেকেই আয়কর অফিসের এক ধরনের সুযোগসন্ধানী কর্মচারীর শরণাপন্ন হন। তাঁরাই ৮০০ থেকে এক হাজার টাকার বিনিময়ে সর্বোচ্চ তিন দিনের মধ্যে টিআইএন নম্বর জোগাড়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলেন। জরুরি হলে টাকার পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেন। যদিও আইন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নম্বরটি বরাদ্দ হওয়ার কথা।
টিআইএনের জন্য যে আবেদন ফরম, তাও অনেক সময় টাকার বিনিময়ে কিনতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সঠিক প্রচারের ব্যবস্থা করলে ওয়েবসাইট থেকেও ফরমটি সংগ্রহ করা যেত।
কিছু অসাধু কর্মচারীর পাল্লায় পড়ে অনেককে আবার নম্বর বরাদ্দের পর তা হাতে পেতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এভাবে প্রতি পদে টিআইএন নম্বর পেতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এসব বিড়ম্বনা এড়াতে এবং সঠিক প্রচারের অভাবে অনেকেই করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর সংগ্রহ করতে নিরুত্সাহিত হচ্ছেন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বৃহৎ কর ইউনিটের ডেপুটি কমিশনার মো. জেহাদ উদ্দিন বলেন, টিআইএন পেতে আইনগতভাবে অগ্রিম কর বাবদ এক হাজার টাকা ছাড়া বাড়তি কোনো টাকা জমা দেওয়া লাগবে না। টিআইএনের জন্য নির্ধারিত আবেদন ফরম বিনা মূল্যে ওয়েবসাইট বা সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে সংগ্রহ করা যাবে। ডেপুটি কমিশনার বরাবর আবেদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই টিআইএন পাওয়া যাবে। কর সার্কেলের ঠিকানা জানতে ঠিকানাসংবলিত নির্ধারিত বই অফিস থেকে সংগ্রহের পরামর্শ দেন তিনি।
টিআইএন জাতীয় রাজস্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এমনিতেই আমাদের দেশের নাগরিকদের মধ্যে আয়কর নিয়ে এক ধরনের অনীহা এবং ভ্রান্তভীতি কাজ করে।
তার ওপর যদি এত সব ভোগান্তি—মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘার মতো এসে যোগ হয়, তাহলে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে, অন্যদিকে জনগণও এ ব্যাপারে নিরুত্সাহিত হবে।
(www.nbr-bd.org)

Beyond the Gavel: The Twists of Prenatal Sex Detection

  In a recent decision, a divisional bench of the High Court Division (HCD) has imposed embargo on pre-natal sex detection in Bangladesh in ...