Tuesday, January 10, 2012

টিআইএন পেতে ভোগান্তি যত

আকবর হোসেন মিরপুরের বাসিন্দা। এসেছিলেন ঢাকার কর অঞ্চল-৮-এর অফিস ৭৪ সেগুনবাগিচায়। ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য টিআইএন নম্বর নিতে এসেছেন তিনি। মিরপুরের বাসিন্দা হয়েও এখানে টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) করাতে এসেছেন কেন, জানতে চাইলে তিনি জানালেন বিষয়টি তাঁর নির্দিষ্ট করে জানা ছিল না। এই অফিস থেকেও এ নিয়ে তাকে কিছু জানানো হয়নি।
প্রত্যেক করদাতারই একটি করে আলাদা টিআইএন নম্বর থাকে। কর দেওয়া ছাড়াও নানা ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ও দৈনন্দিন কাজ সম্পাদনে টিআইএন নম্বরের প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেমন—অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করতে, ট্রেড লাইসেন্স, ক্রেডিট কার্ড পেতে, গাড়ি কিনতে ইত্যাদি।
এসব কারণেই সাধারণ মানুষকে টিআইএন নম্বর জোগাড় করতে প্রতিনিয়ত কর অঞ্চল অফিসে ধরনা দিতে হয়। করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর পেতে হলে যে ব্যক্তি যে এলাকার বাসিন্দা, তাঁকে এলাকা অনুযায়ী নির্ধারিত কর সার্কেলে ডেপুটি কমিশনার বরাবর টিআইএনের জন্য আবেদন করতে হবে। এই কর সার্কেলের ঠিকানা এবং কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জানা থাকেনা অনেকের। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণকে ।
এলাকা অনুযায়ী ঠিকানামতো যেতে না পেরে অনেকেই আয়কর অফিসের এক ধরনের সুযোগসন্ধানী কর্মচারীর শরণাপন্ন হন। তাঁরাই ৮০০ থেকে এক হাজার টাকার বিনিময়ে সর্বোচ্চ তিন দিনের মধ্যে টিআইএন নম্বর জোগাড়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলেন। জরুরি হলে টাকার পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেন। যদিও আইন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নম্বরটি বরাদ্দ হওয়ার কথা।
টিআইএনের জন্য যে আবেদন ফরম, তাও অনেক সময় টাকার বিনিময়ে কিনতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সঠিক প্রচারের ব্যবস্থা করলে ওয়েবসাইট থেকেও ফরমটি সংগ্রহ করা যেত।
কিছু অসাধু কর্মচারীর পাল্লায় পড়ে অনেককে আবার নম্বর বরাদ্দের পর তা হাতে পেতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এভাবে প্রতি পদে টিআইএন নম্বর পেতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এসব বিড়ম্বনা এড়াতে এবং সঠিক প্রচারের অভাবে অনেকেই করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর সংগ্রহ করতে নিরুত্সাহিত হচ্ছেন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বৃহৎ কর ইউনিটের ডেপুটি কমিশনার মো. জেহাদ উদ্দিন বলেন, টিআইএন পেতে আইনগতভাবে অগ্রিম কর বাবদ এক হাজার টাকা ছাড়া বাড়তি কোনো টাকা জমা দেওয়া লাগবে না। টিআইএনের জন্য নির্ধারিত আবেদন ফরম বিনা মূল্যে ওয়েবসাইট বা সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে সংগ্রহ করা যাবে। ডেপুটি কমিশনার বরাবর আবেদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই টিআইএন পাওয়া যাবে। কর সার্কেলের ঠিকানা জানতে ঠিকানাসংবলিত নির্ধারিত বই অফিস থেকে সংগ্রহের পরামর্শ দেন তিনি।
টিআইএন জাতীয় রাজস্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এমনিতেই আমাদের দেশের নাগরিকদের মধ্যে আয়কর নিয়ে এক ধরনের অনীহা এবং ভ্রান্তভীতি কাজ করে।
তার ওপর যদি এত সব ভোগান্তি—মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘার মতো এসে যোগ হয়, তাহলে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে, অন্যদিকে জনগণও এ ব্যাপারে নিরুত্সাহিত হবে।
(www.nbr-bd.org)

No comments:

Post a Comment

Bangladesh After the 2024 Mass Uprising: In Quest of a Digitized Judiciary

  The judiciary of Bangladesh is heavily loaded with negative tags including high backlogs; severe delays; huge costs; corruptions; inconsis...