Tuesday, March 27, 2012

Constitutionality of mobile courts during Hartal

The current Awami League-led government deployed mobile courts on June 11 under the Mobile Court Act, 2009 to prevent anarchy (according to them) during hartal for the first time in the history of independent Bangladesh. BNP politicians alleged that, this type of suppression was done in Pakistan period especially during Ayub Khan’s time. Mobile courts arrested and summarily tried picketers all over the country when the main opposition Bangladesh Nationalist Party enforced a two-day long hartal on June 12 and 13. During the strike, executive magistrate of mobile court took cognisance and instantly meted out punishment to over 100 people all over the country.

Mobile courts were brought out again during the 48-hour hartal called by the BNP and its allies on July 6 and 7. Awami League politicians as well as the home minister and the authorities concerned all mentioned their obligation to maintain peace and affirmed that ensuring public security at any cost was their prime concern. More government officials than one assured that the use of mobile courts during hartal is lawful as the Mobile Court Act 2009 was passed through the legislature by the people’s representatives.
The Mobile Court Act: The Mobile Court Act, 2009 was brought into force on February 24, 2009. Prior to this act, a similar ordinance was passed by the caretaker government in 2007. The act was highly appreciated when this was implemented to prevent stalking and sexual harassment of women and adulteration of victuals. Now, the same law is being criticised by rights activists, lawyers, and politicians for the violation of general principles of law and suppression of political activists and even uninvolved citizens.
According to section 6(1) of the act, the magistrate can only try a person if the culpability falls under the offences specified in the schedule of the act and if the magistrate catches him red-handed and if he confesses to his crime.

In accordance with section 7(1), after taking cognisance, the magistrate will frame written charge against the offender and ask whether he confesses to his crime and, if he doesn’t, ask for explanation. The magistrate can punish by imprisonment or fine or both if the wrongdoer confesses.

Constitutionality of mobile court: Our constitution guarantees freedom of assembly and association in Articles 37 and 38 respectively. In a democratic society, general strike is legal unless and until it is declared illegal by an enactment or by the intervention of the court.
Article 32 of the constitution has a provision regarding personal liberty. The government cannot curtail citizens’ right to liberty without a lawful explanation; it doesn’t have the authority to confine a person without any valid reason, not even for a second.
Again, Article 31 of the constitution provides that the citizens have equal right to get the protection of the law. The government cannot legally prevent a party or a body that wishes to peacefully observe a strike.
In addition, Article 33 provides safeguards against arrest and detention. Bail is a mandatory provision, even for some cases of grievous offence, to ensure natural justice. However, bail is the name of an abstract dream to someone who is convicted instantly, on the spot, without adherence to definite rules of investigation, witness, examination, cross-examination and providing evidence.
Moreover, Articles 35(3) and (4) of the constitution provides the right to obtain fair and open trial by a competent forum and protection from providing evidence against himself. But the sole means to punish the accused under mobile court law is if the accused testifies against himself, which makes it extra-constitutional.
During hartal, opposition leaders were confined either at their office or at their residence by platoons of members of law enforcing agencies. It was nothing but a violation of the right to free movement, a fundamental right guaranteed in Article 36 of the constitution.
Another established principle of natural justice is that every person shall have the right to defend himself before punishment and can appoint a lawyer to this end. However, in this case, the law has no provision of self-defence, which is a grave violation of the general principles of law and human rights as well.
A further incongruous stipulation of this act is that the magistrate who will take cognisance and frame charge will himself conduct trial. There is no precedent in the world of the same person bringing the allegation and trying the accused.
Sections 186 and 353 of the penal code provide for action against obstruction to government duty and govt. can enforce these provisions.

Executive versus judiciary: Mobile court is not a proper forum, because here, the government applies its executive power to try, which contravenes the principle of separation of power and independence of judiciary. This creates a scope of abuse of judicial power by the executive.
Furthermore, there is a possibility of this instrument being exploited for personal vengeance and we have already heard of some cases where the executive magistrate allegedly used the power vengefully.
The government argues that the law enacted by the House is valid, without doubt. But it may have forgotten that a law passed by parliament, if inconsistent with the spirit of the constitution, shall be void to that extent of inconsistency [Article 7(2)].

Experiences of Hartal and mobile court: There is widespread allegation of innocent people being convicted through it. During the strike on June 12 and 13, many picketers were tried by the mobile court at the police station. It is a complete violation of Sections 6(1), 7(1), (2), (3), (4) and 11 the Mobile Court Act 2009, because according to these provisions, executive magistrate and district magistrate has the authority only to set up a court within their local territorial jurisdiction. They can pronounce sentences only at the moment of occurrence and for offences performed in their presence. However, at the time hartal, the police arrested people and brought them to the station where they were tried instead of at the place of occurrence.
In Bangladesh, people are often harassed by law enforcement agencies and now the Mobile Court Act itself has opened the doors of harassment in a supposedly legal way.

Sunday, March 18, 2012

থানায় মামলা নিতে না চাইলে যা করবেন


আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটনের পর কেউ থানায় মামলা করতে চাইলে পুলিশ বিনামূল্যে সে মামলা নিতে বাধ্য। কিন্তু বাস্তবে প্রায়ই এমন অভিযোগ শোনা যায় যে, পুলিশ থানায় মামলা নিতে চায় না। কোন কারণে পুলিশ যদি কখনো থানায় মামলা নিতে না চায়, তাহলে সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিচারিক হাকিমের আদালতে নালিশি অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের বিচার চেয়ে মামলা দায়ের করা যায়। তবে সংঘটিত অপরাধ আমল অযোগ্য হলে সবসময়ই সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট নালিশি মামলা দায়ের করতে হয়। আমল অযোগ্য অপরাধ হলো সেই সমস্ত অপরাধ যে সকল অপরাধ সংঘটনের দরুণ পুলিশ বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারে না এবং এ সকল অপরাধ বিষয়ে তদন্ত করতেও সংশ্লিষ্ট বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয়। কোনটি আমলযোগ্য এবং কোনটি আমলঅযোগ্য অপরাধ তা ফৌজদারী কার্যবিধির দ্বিতীয় তফশীলের তৃতীয় কলামে বিধৃত করা রয়েছে।
ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী নালিশ মানে হলো কোন অপরাধ সংঘটন বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার নিমিত্তে মৌখিক বা লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট বিচারিক হাকিমের নিকট আবেদন জানানো। যদি কোন আমলঅযোগ্য অপরাধ সংঘটনের খবর কেউ সংশ্লিষ্ট থানায় নিয়ে যায় তবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (O.C) বিষয়টি সাধারণ ডায়েরিতে (G.D) লিপিবদ্ধ করে অভিযোগসহ অভিযোগকারীকে মহানগরের ক্ষেত্রে মুখ্য মহানগর হাকিম বা মহানগর হাকিম এবং মহানগরের বাইরের এলাকার ক্ষেত্রে মুখ্য বিচারিক হাকিম বা কোন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট অথবা বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করবেন। এক্ষেত্রে থানায় না যেয়ে সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট যেয়েও লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার প্রার্থনা করা যায়। অথবা পুলিশ যদি আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটনের পর থানায় এজাহার নিতে অস্বীকৃতি জানায় সেক্ষেত্রেও সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট নালিশি মামলা দায়ের করা যায়।
ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতিঃ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট মৌখিকভাবে অভিযোগ দায়ের করতে চাইলে ঘটনার আদ্যোপান্ত আদালতে খুলে বলে ঘটনার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আবেদন করতে হবে। তারপর দায়েরকৃত অভিযোগের কোন ভিত্তি আছে কি-না তা পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগকারীকে এবং প্রয়োজন মনে করলে ঘটনার কোন সাক্ষী থাকলে তাঁদেরকে শপথের মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন। পরীক্ষার সারসংক্ষেপ লিখে তিনি নিজে, অভিযোগকারীর এবং কোন সাক্ষী থাকলে তাঁর স্বাক্ষর নিবেন। তবে কেউ দরখাস্তাকারে ঘটনার পূর্ণ বিবরণসহ লিখিত অভিযোগ দায়ের করে প্রতিকার দাবী করলে এরূপ পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত পরীক্ষায় সন্তুষ্ট হলে বা লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগটিকে একটি সি.আর কেস নম্বর (Complaint Register case number) বা সি.আর.পি কেস নম্বর (Complaint Register Petition case number) দিয়ে নথিভুক্ত করবেন। এজন্য একে সি.আর মামলাও বলে।
তবে শপথ পরীক্ষার সময় সংশ্লিষ্ট বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট যদি অপরাধ সংঘটন বিষয়ে অভিযোগকারীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট না হন অথবা যদি অভিযোগকারী মামলার ভিত্তি (Prima facie) প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন তবে ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি আমলে না নিয়ে আবেদনটি খারিজ করে দিতে পারেন। নালিশি পিটিশনটি খারিজ হলে অভিযোগকারী খারিজাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে দায়রা জজ আদালতে বা হাইকোর্ট বিভাগে উক্তাদেশ ঘোষণার ৬০ দিনের মধ্যে রিভিশনের আবেদন করতে পারেন।
অভিযোগ আমলে নেয়ার ফলাফল ও তদন্তে প্রেরণঃ অভিযোগটি আমলে নিলে ম্যাজিস্ট্রেট বিবাদী পক্ষের বিরুদ্ধে সমন জারী করে আদালতে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য উপস্থাপনের নির্দেশ দিতে পারেন অথবা আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নিতে থানাকে নির্দেশ দিতে পারেন। ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট থেকে আদেশপ্রাপ্ত হলে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগটি থানায় এজাহার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে মামলার জন্য প্রয়োজনীয় পরবর্তী পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করবে। আবার অআমলযোগ্য অপরাধের বেলায় বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত করতে ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশকে নির্দেশ দিতে পারেন। এক্ষেত্রেও আদিষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অভিযোগটি বিষয়ে তদন্ত শুরু করবে এবং তদন্তকালীন সময়ে আমলযোগ্য অপরাধ তদন্ত করার মতোই ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবে। অভিযোগের তদন্ত শেষে পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিলে কিংবা অভিযোগের কোন ভিত্তি খুঁজে না পেলে পুলিশের দাখিলকৃত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী নারাজি দিতে পারেন অর্থাৎ পুলিশ প্রতিবেদনে তিনি কেন সন্তুষ্ট নন আদালতে সে কারণ দর্শীয়ে অভিযোগটির পুনঃতদন্তের আবেদন করতে পারেন।
তবে প্রয়োজন মনে করলে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য অথবা অধিকতর তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার উদ্দেশ্যে তিনি নিজে বা তাঁর অধস্তন অন্য কোন ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দিতে পারেন। অভিযোগটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরও তদন্ত কার্যে সম্পৃক্ত করতে পারেন।
মনে রাখা জরুরিঃ নালিশি মামলার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, এক্ষেত্রে রাষ্ট্র প্রথম থেকেই পক্ষ হয়ে মামলা শুরু করে না। যেমনটা থানায় এজাহার রুজুর মাধ্যমে মামলা দায়ের করলে রাষ্ট্র নিজে পক্ষভুক্ত হয়ে পরবর্তীতে মামলা পরিচালনা করে। ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নেয়ার আদেশ দিলে রাষ্ট্র তখন মামলার পক্ষ হয়ে পরবর্তীতে মামলা পরিচালনা করে। তাই নালিশি মামলার ক্ষেত্রে কেউ অভিযোগ দায়ের করে পরবর্তী শুনানির দিন যদি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির না হন কিংবা ঘটনা তদন্তান্তে যদি অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত না হয় তবে ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি খারিজ করে দিতে পারেন। অভিযোগকারী চাইলে এ ধরনের খারিজাদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতে বা হাইকোর্ট বিভাগে উক্ত আদেশ ঘোষণার ৬০ দিনের মধ্যে রিভিশন আবেদন করতে পারেন। নালিশি মামলা সাধারণত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিই রুজু করতে পারেন।
শেষ কথাঃ কাজেই থানায় কখনও মামলা নিতে না চাইলে বিচলিত হয়ে নিজেকে অসহায় ভাবার কোন কারণ নেই। আইনানুযায়ী যে কেউই এরকম পরিস্থিতিতে সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে নালিশি মামলা দায়ের করে আইনের আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারেন। তবে আমাদের দেশের বাস্তবতায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসহায় ও দরিদ্র বিচারপ্রার্থীরা থানায় আইনের আশ্রয় না পেলে পুলিশকে টপকে অজ্ঞতা, দৈনতা ও নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার দরুণ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না। জনগণের ন্যায় বিচার পাবার অধিকার নিশ্চিত করতে তাই এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের আইনগত সহায়তা প্রদান কর্মসূচীও ব্যাপক পরিসরে বাড়ানো উচিত। নিবন্ধটি ১৮-০৩-২০১২ তারিখের প্রথম আলোর আইন অধিকার পাতায় প্রকাশিত।

Sunday, March 4, 2012

গৃহশ্রমিকদের অধিকার কতদূর...

গৃহশ্রমিকের ওপর নির্যাতন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু দিন দিন গৃহশ্রমিকদের প্রতি পাশবিক অত্যাচার ও নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ বছরে গৃহশ্রমিকের ওপর ৭৯৮টি নির্যাতনের ঘটনায় ৩৯৮ জন মারা গেছে। শুধু গত বছর ১২ অক্টোবর পর্যন্ত মারা গেছে ৩৩ জন।
গণমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিন এ রকম একেকটি পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশিত হচ্ছে। তার মধ্যে গৃহকর্মী শিশু হাসিনা (১১), তানিয়া আক্তার (১০), রোমেলা খাতুন (১০), রাশিদা বেগমের (২৪) ওপর চালানো শারীরিক নির্যাতন আমাদের হতবিহ্বল করে দেয়। হাসিনার শরীরের প্রতিটি ইঞ্চিতে ছিল জখমের চিহ্ন। রোমেলা নির্যাতনের শিকার হয় সীতাকুণ্ড থানার উপ-পরিদর্শক শাহেদ আলী ও তার স্ত্রী সুইটি বেগমের বাসায়। রোমেলা বলেছে, একবার পিটুনিতে মুখ কেটে গেলে সুইটি বেগম সুঁই-সুতো দিয়ে তা সেলাই করে দেয়। তানিয়ার তো জীবনপ্রদীপই নিভে গেল। সর্বশেষ গত ১৬ ডিসেম্বরে রাশিদা বেগমকে রাজধানীর শাহবাগ থানার আনন্দবাজার এলাকায় একটি বাড়ির তিন তলা থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগ পাওয়া যায়। কাজ করতে দেরি হওয়ায় গৃহকর্ত্রী রাশিদাকে তিন তলা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
এভাবে একের পর এক গৃহকর্মী নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলেছে। নির্যাতনকারী বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী হওয়ায় দরিদ্র, অসহায় নির্যাতিত এসব মানুষ নূ্যনতম বিচার পাচ্ছে না। যেন গৃহশ্রমিকরা মানুষ নয়, তারা যেন মালিকের কেনা সম্পত্তি।
দেশের সিংহভাগ ক্ষেত্রে দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠী জীবিকার তাগিদে গৃহকর্মে সহযোগিতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা অসহায়, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্ত নারী অথবা মেয়ে শিশু। ২০০৬ সালে পরিচালিত এক জরিপ থেকে জানা যায়, দেশে যে ২ মিলিয়ন শিশু শ্রমভিত্তিক কাজে নিয়োজিত তার মধ্যে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ গৃহকর্মে নিয়োজিত। এদের মধ্যে ৭৮ শতাংশই মেয়ে শিশু এবং ৯৪ ভাগ পূর্ণকালীন কাজ করে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশে বর্তমানে গৃহশ্রমিকের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি।
তারা কাজ করে দিনে প্রায় ১১-১২ ঘণ্টা। কাজের তুলনায় এদের বেতন খুবই সামান্য। ৬০ শতাংশ নিয়মিত বেতন পায়, বাকি ৪০ শতাংশ অনিয়মিত। এসব গৃহশ্রমিক দিনভর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করলেও বিনিময়ে কিছু সুযোগ-সুবিধা তো দূরের কথা, সহানুভূতিটুকুও পায় না। গৃহকর্মীদের কাজের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। কাকডাকা ভোরে তারা কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মধ্যরাতে অবসর মেলে। অসুস্থ অবস্থায় এমনকি গর্ভকালীন অবস্থায়ও তাদের ছুটি মেলে না। তাদের নেই ট্রেড ইউনিয়ন করার বিধান। বাংলাদেশের শ্রম আইন গৃহশ্রমিককে শ্রমিকের অন্তর্ভুক্ত করেনি। গৃহপরিচারিকাদের কাজের সময় কোনো নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না। তাই মালিকের ইচ্ছা ও সন্তুষ্টির ওপর চাকরি নির্ভর করে।
বিলসের সূত্র অনুযায়ী, গৃহকর্মীদের রাত যাপনের নির্দিষ্ট কোনো ঘর নেই। পত্রিকার পাতা খুললে প্রায় দিনই গৃহকর্মীদের ওপর যৌন নিপীড়নের খবর পাওঢা যায়। সিংহভাগ ক্ষেত্রে এর জন্য দায়ী গৃহকর্তা বা তার কোনো আত্মীয়। কালেভদ্রে যৌন নিপীড়ন বা শারীরিক নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হলে লোক দেখানো চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং অর্থের বিনিময়ে আপসের ব্যবস্থা করা হয়। শিশু গৃহকর্মী সারাক্ষণ কাজের মধ্যে থেকে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত বঞ্জিত হচ্ছে।
গৃহকর্মীদের জন্য দেশে একটি মাত্র আইনই বিদ্যমান। তাও নিবন্ধন সংক্রান্ত। এ আইনের অধীনে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। আইনটি সম্বন্ধে অনেকে জানেনও না। আইনটি হলো গৃহপরিচারিকা নিবন্ধন অধ্যাদেশ-১৯৬১। আইনটি শুধু ঢাকা সিটি করপোরেশনে প্রযোজ্য। আশার কথা, সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় ২০০৯ সালে এনজিও কর্মীদের সমন্বয়ে গৃহশ্রমিকদের বিভিন্ন অধিকারের সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে 'গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা' নামে খসড়া একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। খসড়া প্রণয়নের ২ বছর অতিক্রান্ত হলেও বিবিধ অজুহাতে সরকার এখনও খসড়া নীতিমালাটি কার্যকর করছে না। নীতিমালা অনুযায়ী, ১৪ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে গৃহকাজে নিয়োগ করা যাবে না। কোনো গৃহকর্মীকে তালাবদ্ধ করে রাখা যাবে না। তবে তার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বাড়ি তালাবদ্ধ করতে হলেও একটি চাবি তার কাছে রাখতে হবে।
বয়স ও সামর্থ্যের সঙ্গে অসামঞ্জস্য বিবেচিত ভারী ও বিপজ্জনক কাজে কিশোর-কিশোরীদের নিয়োগ করা যাবে না। দেশের সব সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কার্যালয়, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ গৃহশ্রমিকদের নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হবে। নীতিমালায় গৃহকর্মীর ছবিসহ পরিচয়পত্র ও সপ্তাহে কমপক্ষে এক দিন ছুটির কথা বলা হয়েছে। গৃহকর্মী হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হলে সুবিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। গর্ভকালীন ও প্রসূতিকালীন সুবিধা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করার কথাও নীতিমালায় বলা আছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত নারীর এ গৃহশ্রম ও পরিবারকে ভালোবেসে যে শ্রম প্রদান করে তাকে 'ভালোবাসার অর্থনীতি' আখ্যায়িত করে ভালোবাসার অর্থনীতির আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করেছেন প্রায় ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। জিডিপিতে এই মূল্যমান যোগ করা হলে জিডিপি বেড়ে দাঁড়াবে ৭ লাখ ১৭ হাজার ১২ কোটি টাকা। এ হিসাবের ভিত্তি হলো বাংলাদেশে ১০ বছর ও তদূর্ধ্ব নারীরা গৃহস্থালি কাজে বছরে সময় ব্যয় করেন ১৬ হাজার ৬৪১ কোটি শ্রমঘণ্টা।
তবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪, ১৫, ১৭, ২৮ (৪) ও ৩৪ অনুচ্ছেদ গৃহশ্রমিকের অধিকার প্রচ্ছন্নভাবে হলেও রক্ষা করেছে। কেবল আইন করে বা আইন প্রয়োগ করে গৃহশ্রমিকের ওপর নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়। মানবিক মূল্যবোধ, সহানুভূতি ও সামাজিক সচেতনতাই এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। পাশাপাশি সরকারি কিছু পদক্ষেপ নির্যাতন নিরোধে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে। আর সেই সঙ্গে গৃহশ্রমিকদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতনতা তাদের জন্য বয়ে আনতে পারে মুক্তির বার্তা।
 লেখাটি সমকালের ২৬-০২-২০১২ তারিখের নারীস্থান পাতায় প্রকাশিত।

Beyond the Gavel: The Twists of Prenatal Sex Detection

  In a recent decision, a divisional bench of the High Court Division (HCD) has imposed embargo on pre-natal sex detection in Bangladesh in ...