Thursday, October 18, 2012

YouTube: Shut down cannot be a solution


A movie named “Innocence of Muslims” allegedly by Nakoula Basseley firstly released on YouTube (World’s largest video sharing website, hereinafter referred as “The Site”). The movie insults Prophet Muhammad and Islam. Consequently, Muslims from all over the world explode with grave reaction and censure against the movie. Some of them were more violent which even caused death in some country. Albeit, all we know that Islam is religion of peace.

Indubitably, the maker(s) of this film creates anarchy among the global village. In addition, they infringe the notion of freedom of expression. They should exercise their right responsibly and reasonably. The right to freedom of expression is not beyond responsibility.

Similar to rest of the world, Muslims of our country are offended by this film. A very little portion of them reacted aggressively while a group of them wanted to protest National Women Policy on this occasion when they made clash with police at National Press Club premises on 22 September. On this ground, they have already been observed a daylong strike (hartal) in this territory. Although, the leaders of this movement were unaware about the contents of the said cinema and its linkage with the site.

At this situation, on 16 September, Government of Bangladesh directed Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission (BTRC) to request the authority of the site to remove the film from their web page. On 17 September night around at 10.30 P.M while BTRC did not get any reply from the requesting authority, they decided to shut down the site from Bangladesh.

However, dying the entire site from the country was not the only alternative to Bangladesh government. Because BTRC has an option to write to the concern authority to block those specific links, which contain the movie and clippings from our territory. It was happened in Egypt, Libya, Syria, Iran, Malaysia and even in India. YouTube authority was prohibiting access to those controversial videos from these countries. 

Regrettably, government of our country forbids whole YouTube and still (till 14 October) the site is prohibited in our country. Perhaps no one but the God knows how long govt. wishes to restrict the site. Because YouTube has already clarified that, they do not withdraw the film from their site due to their policy to withdraw any video uploaded except pornography. If govt. decides to revive the site after some days then what would be their justification to close the site previously? Otherwise, probably we will perpetually be deprived from accessing YouTube for this film. 

Cutting the whole brain while headache is nothing but a whimsical decision which our govt. prefer often. Otherwise, they do not took such a gibberish  decision. YouTube not only contains “Innocence of Muslims” rather it exhibits so many constructive materials, which can enrich our life. A huge portion of them are relating with education. Famous Khan Foundation and other organizations circulate their enlightening educational videos through YouTube from one corner to another corner of the earth. A lot of Bangla educational videos are also available now on YouTube. Hence shutting down of the whole site is an instance of cutting down citizens’ right to access internet freely (now a days access to internet is regarded as a right). By closing down the total site like Pakistan, Bangladesh government probably showed extremist approach towards the planet.

Closing YouTube is not at all an appropriate conclusion to prohibit people from watching the movie. Because modern technology unlocks various gate to explore the world. One can spread the movie through email from abroad; even it can be watched from Bangladesh through proxy site and by many other alternatives.

In today’s world, cyber crime evolved as an anxiety as well as very complex to determine liability. It is extremely difficult to confine the ambit of citizens’ freedom to access internet by imposing restriction. It can call danger instead of a solution. Technical approach from government to this dilemma can resolve the matter amicably. Hence, closing down any web site i.e. facebook or YouTube  cannot be a solution rather taking shelter of proper way could be an effective means to restrain these types of  destructive  activities.

Tuesday, June 26, 2012

MEANING (Elaboration) of LL.B, LL.M, LL.D

An LL.B is the award of the degree of Bachelor of Laws. LL.B is a Latin word. It stands for ‘Legum Baccalaureus’, signifying 'Bachelor of Laws. In Latin abbreviations, the plural form of a word is indicated by doubling the letter- hence ‘LL.’ is short for Laws.



LL.M is Latin abbreviation for 'Legum Magister', signifying 'Master of Laws'.

LL.D is Latin abbreviation for 'Legum Doctor', signifying 'Doctor of Laws'.

Thursday, June 14, 2012

সরকারি অফিসে হলে আদালতে নয় কেন?


বিগত ৫ জুন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আনুষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা ব্যতীত সকল সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পুরুষ কর্মকর্তাদের মার্চ-নভেম্বর মাসে তাদের স্বীয় কর্মস্থলে পোশাক হিসেবে স্যুট-টাই না পরতে একটি পরিপত্র জারি করেছে। এর আগে ২০০৯ সালে একই বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুরূপ একটি পরিপত্র জারি করেছিল। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ভাষায় পরিপত্রটি ঠিকমতো অনুসরণ হচ্ছেনা বিধায় তারা এবার আবার পরিপত্রটি পুনরায় জারি করেছেন। পূর্বের পরিপত্রটিতে পুরুষ কর্মকর্তাদের প্রতি অর্ধহাতা শার্ট পরার নির্দেশ জারি করা হলেও বর্তমান আদেশে  কেবল অর্ধ/পূর্ণ হাতা শার্ট এবং প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ ধরণের পরিপত্র জারির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে যেয়ে বলেছেন মূলত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার লক্ষ্যে তারা এমনটা করেছেন। পরিপত্রে সরকারি অফিসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।

আমাদের দেশ নাতিশীতোষ্ণ হলেও মূলত গ্রীষ্ম প্রধান দেশ। দেখা যায় এ দেশে সাত-আট মাস উষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে, বিশেষ করে মার্চ-আগস্ট মাসে অত্যাধিক তাপমাত্রা অনুভূত হয়। পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর তাপমাত্রা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এবং পরিবেশও আগের তুলনায় অধিকহারে উষ্ণ হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতে শার্ট-প্যান্টের ওপর কালো কোট গায়ে দিয়ে তার ওপর কালো রঙয়ের আচকান/গাউন চাপিয়ে টাই বা ব্যান্ড পরে পেশাগত দায়িত্ব পালন করা আর দাগি আসামীকে উষ্ণ আবহাওয়ার মধ্যে নিজের শরীরের তাপমাত্রা আটকে রাখার পূর্ণ ব্যবস্থা করে সাজা দেয়া একই কথা।

অথচ বিনা দোষে আমাদের আদালত পাড়ার বিচারক এবং আইনজীবীদের প্রতিনিয়ত গ্রীষ্মের এই প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যেও এহেন অমানবিক শাস্তি ভোগ করে যেতে হচ্ছে। দেওয়ানী নিয়ম ও আদেশের প্রথম খণ্ডের সাইত্রিশ অধ্যায়ে আইনজীবীদের পেশাগত পোশাক নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। উক্ত আইনের ৮২৫ ও ৮২৬ নিয়মানুযায়ী আইনজীবীগণের জন্য পেশাগত দায়িত্ব পালন করার সময় উপর্যুক্ত পোশাক পরিধান বাধ্য করা হয়েছে। এই নিয়মের ব্যতয় হলে অনেক সময় আইনজীবীদের বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নিতেও দেয়া হয়না।

কালো রঙয়ের পোশাক সূর্যের সকল আলোক রশ্মি শোষণ করে শরীরের তাপমাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয় একথা কারো অজানা নয়। মূলত বৃটিশ শাসনামল থেকে আমাদের এ উপমহাদেশের আইনজীবী ও বিচারকদের মধ্যে এ ধরণের পোশাক পরার চল। তাছাড়া প্রায় সারা বিশ্বেই পেশাভিত্তিক বিশেষকরে আইনজীবীদের জন্য নির্ধারিত পোশাক রয়েছে। তাই পেশাগত পোশাক নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে যেমন পেশার মর্যাদা, ঐতিহ্য, প্রতীকী অর্থ ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি আমলে নিতে হবে ঠিক তেমনি পোশাকটি কতটুকু ব্যবহার উপযোগী সেদিকেও বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।  অন্যথা পোশাক নির্ধারণের পুরো উদ্দেশ্যই ব্যহত হবে।

এক্ষেত্রে দেশের আবহাওয়া, সংস্কৃতি, ব্যবহার উপযোগীতা কোনক্রমেই উপেক্ষা করা যায়না। অথচ আমরা বৃটিশ শাসনামলের অবসানের অর্ধ শতাব্দীরও বেশি পেরিয়ে এসে আজও অন্ধের মতো নিজেদের স্বস্তি উপেক্ষা করে তাদের বাতলে দেয়া নিয়ম অনুসরণ করে চলছি! তাছাড়া আইনটি যখন প্রণয়ন করা হয়েছিল তখনকার পরিপ্রেক্ষিতে এবং শীতকালে উপরোল্লিখিত পোশাক মানানসই হলেও বর্তমান জলবায়ুর পরিবর্তীত প্রেক্ষাপট এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বাস্তবতায় তা কোনমতেই যৌক্তিক নয়। অন্যান্য দেশে যদি তাদের আবহাওয়ার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পোশাক পরে আইন পেশা পরিচালনা করা যেতে পারে, তবে আমাদের দেশে নয় কেন?

তাই আমাদের দেশের বিচারঙ্গনে গ্রীষ্মকালে সাদা রঙের শার্টের সঙ্গে কালো/সাদা প্যান্ট এবং কেবলমাত্র শীতকালে অতিরিক্ত হিসেবে কালো কোট, গাউন, টাই ব্যবহার করা যেতে পারে। তাতে নিশ্চয় আইন পেশার মর্যাদাহানী হবেনা কিংবা আইনজীবীদের শনাক্ত করতেও অসুবিধা হবেনা। শনাক্তকরণ সমস্যা দূর করতে পরিচয়পত্র ব্যবহার করা যেতে পারে।

অসহ্য গরমের কারণে যদি একটি মানুষ ধৈর্য হারিয়ে অসহিষ্ণু হয়ে পড়েন তবে তিনি বিচারপ্রার্থীর ওপর ন্যায়বিচার করবেন কীভাবে? অথচ খুব সহজেই এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। আমাদের উচ্চ আদালত কেবলমাত্র একটি নির্দেশনা জারি করেই সরকারি অফিসের মতো গ্রীষ্মকালে বিচারক ও আইনজীবীদের  কালো কোট, কালো রঙয়ের আচকান/গাউন, টাই ইত্যাদি অপ্রয়োজনীয় ও ব্যবহার অনুপযোগী পোশাক পরিধান করার হাত থেকে পরিত্রাণ দিতে পারেন। এজন্য যদি আইন পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় তাহলে আইনসভাও সে ধরণের উদ্যোগ নিতে পারে। কারণ আইন সভার স্পিকারসহ অনেক সদস্যই আইনপেশার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বিধায় তারাও বিষয়টি ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন।

অন্যথা বিচারক-আইনজীবী মিলে ঐকমত্যে পৌঁছে এ ধরণের প্রতিকূল ও অমানানসই পোশাক পরিবর্তনের জন্য চাপ তৈরি করতে পারেন। কারণ বিষয়টির সঙ্গে পরোক্ষভাবে বিচারপ্রার্থীদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রশ্ন একটুখানি হলেও জড়িত। আইনজীবী বা বিচারক শুধুমাত্র আরামদায়ক পোশাকের অভাবে যদি বিচারকালীন সময় অস্বস্তি বোধ করেন তবে তা যে বিচার কাজকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে এ ব্যাপারে নিশ্চয় বোধকরি কেউ দ্বিমত পোষণ করবেননা।  

অন্তত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য হলেও আইনজীবীদের প্রচলিত পোশাক পরিবর্তন করা আবশ্যক। উপরন্তু, যেদেশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট নৈমিত্তিক ঘটনা সেদেশে অগ্নিতুল্য গরমের মধ্যে বাস করে এধরণের উদ্ভট পোশাক পরে বিচারকার্য পরিচালনা করা বিলাসিতা এবং এক ধরণের প্রহসন ব্যতীত ভিন্ন কিছু নয়। সরকারের যে নির্বাহী বিভাগ যাদের আমরা অনেক বেশি আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে প্রিয় বলে জানি তারা যদি দেশের স্বার্থে ও বিশেষ প্রয়োজনে নিজেদের সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিতে আরামদায়ক পোশাক পরে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারে, তবে আইনজীবীরা কাঠফাটা রোদের মধ্যে কালো কোট, গাউন, টাই না পরলে তাদের পেশার কী এমন মান যাবে?

সবিশেষে মাননীয় প্রধান বিচারপতি এবং আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, পেশাগতভাবে আপনারাও আইন পেশায় সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে ঋতুভেদে  এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে আইনাঙ্গনের প্রচলিত পোশাক পরিবর্তনের যৌক্তিকতার ওপর আপনাদের সহমর্মিতা প্রকাশ করে এবং যথাযথ ও কার্যকরী উদ্যোগ নিতে নিশ্চয়ই আপনারা দ্বিধা বোধ করবেননা।

Friday, June 8, 2012

Right to speech Vs. Parliamentary privileges


As we know that our motherland has constitutional ascendancy, instead our parliament has some privileges as we belong to a Parliamentary democratic system. Article 78 of our supreme charter ensures Parliamentary privilege in its each syllable. In addition, sub-art. (5) empowers legislative body to enlarge these privileges by an Act of Parliament. Sub-arts. (1) to (4) guaranteed immunities for Parliament, MPs, its committees and even its officials to exercise liberties in respect of saying anything, powers relating to regulation of procedure, conduct of business, maintenance of order, vote, any publication under parliamentary authority from judicial action. Even Art 78(2) affirmed that no court has jurisdiction to scrutiny MPs function within the ambit of Parliamentary powers.

However, our legislature enjoys these immunities from the beginning of its Parliamentary history. Sometimes it invokes debate with civil society and court. We witnessed rat race between the House of Commons and English court on the ground of privilege. The scenario is little bit different in our territory because our court can strike down a legislation passed by the parliament by virtue of constitution even if it passed under the authority of Art. 78(5). Apart from powers conferred by Art. 78, Supreme Court can explore the validity of an action relating with privilege.

It is the constitutional right to the parliamentarian that they can say anything in exercising their parliamentary duty. The constitution does not impose any restriction in this regard whereas it furnishes a shopping list of limitation to exercise right to speech. However, our lawmakers habitually misused the constitutional notion of free speech. Often the ruling party members attack the opposition and vise versa. Even they do not hesitate to deliver colloquial speech to slur posthumous founder of both the leading parties. Though these words are not subject to judicial action but MPs have an obligation to exercise their privilege reasonably. Normally, they expense a mentionable time in parliament either to admire their own party leaders or to show their verbal power to fright and insult the opposition.

Further, it is evident that lawmakers of our legislature usually cannot tolerate their criticism. Repeatedly, they show severe reaction toward their critics. Sometime they do this intrusively as we seen it toward Prof Abdullah Abu Sayeed. They want to summon Prof Sayeed before the Parliament for asking him and also demand to render apology from nation since they represent the nation. Legislators claim to do this on the basis of a fabricated newspaper report without investigating the statement what Prof Sayeed was actually said.

Though, Art. 1 sec. 5 of the U.S constitution has a provision to punish both members and nonmembers for disorderly behaviour and contempt of congress, which obstruct parliamentary proceeding or inquiry, however, Art. 78(2) does not confer any such power to the parliament to punish a nonmember for contempt which had done outside the precincts of the House and which has no effect on parliamentary proceeding. In a situation like this court can interfere the immunity by interpreting the controversial act and its effect on the function of the House of the Nation. Nevertheless, Rule 313 of the Rules of Procedure of Parliament authorizes the Speaker to direct any nonmember to leave the vicinity of the House.

Hence, if Prof Sayeed tells the alleged statement (though it is not) yet the House has no power to call him or to convict him by virtue of Parliamentary privilege. Because he made his statement beyond parliament’s precincts and his statement probably not obstruct to perform parliament’s duty. His speech does not fall within the domain of Parliamentary privilege. Because “in a democratic society there is always a social and political imperative for freedom of speech and expression and Parliament should not be oversensitive to public criticism” as it said by famous jurist Mahmudul Islam in his book Constitutional Law of Bangladesh.

Furthermore, freedom of speech and expression is a fundamental right to the citizens of Bangladesh, which is guaranteed by the supreme will of the people of this soil. Hence a rule of procedure made by the parliament under the authority of Art. 75  cannot barred a fundamental right and it must conform the requirement of Art. 26. Otherwise, an aggrieved can challenge that rule by virtue of Art. 7 and 26 and the court can examine the validity of such a rule in spite of the privilege.

Frequently our representatives tell that Parliament is supreme among others. They may be forgotten that each principal organ of the state is equal and Constitution is supreme in this land. They should bear in mind that it is the constitution, which is the ultimate will of the people and this constitution confers the powers to assassinate any decision of Parliament to the court, which is inconsistent with peoples’ will.

Sunday, May 20, 2012

পুলিশি তদন্তে অসন্তুষ্ট হলে প্রতিকার কী?

অপরাধ সংক্রান্ত মামলার বিচারের জন্য আসামীদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণ করতে ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া অত্যাবশ্যক। পক্ষপাতহীন একটি তদন্ত রিপোর্ট একদিকে যেমন মামলাটিকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিতে পারে ঠিক তেমনি তদন্ত প্রক্রিয়া আসামীদের দ্বারা কোনভাবে প্রভাবিত হলে তা পুরো মামলার মোড় ঘুরিয়েও দিতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারণত রাষ্ট্র বাদী হয়ে মামলা রুজু করে এবং ঘটনা তদন্তের দায়ভার পুলিশের ওপরই বর্তায়। অভিযুক্ত আসামীদের অপরাধ প্রমাণে প্রশ্নাতীত তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে পুলিশে লোকবল, সময়ের, অবকাঠামোর, আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদির যেমন অভাব রয়েছে তেমনি কিছু পুলিশের কাছ থেকে অপরাধ তদন্তে যে সবসময় যথেষ্ট দক্ষতা, নিষ্ঠা, সততা ও কর্মউদ্দীপনা পরিলক্ষীত হয়না একথাও নিশ্চয় কেউ অস্বীকার করবেন না।

পুলিশের বিরুদ্ধে প্রভাবমুক্তভাবে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল না করার অভিযোগ অনেক পুরোনো। এ ধরণের ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আসামীদের সাথে পুলিশের যোগসাজশে কিংবা রাজনৈতিক, সামাজিক প্রভাব খাটিয়ে অথবা অনৈতিক আর্থিক লেনদেন মাধ্যমে অভিযুক্ত পক্ষ অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে পুলিশকে প্রভাবিত করে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে তদন্ত রিপোর্ট আদালতে পেশ করার ব্যবস্থা করে। অপরাধ সংঘটনের পর মামলা দায়ের করা হলে কিংবা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট থেকে আদেশ প্রাপ্ত হলে পুলিশ তদন্ত কাজ শুরু করতে বাধ্য। পুলিশের দায়িত্ব হলো সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করা। তবে ঘটনা বা অপরাধের মাত্রার ওপর নির্ভর করে ক্ষেত্র বিশেষে ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে পুলিশের সময় চেয়ে করা আবেদন আমলে নিয়ে তদন্তের মেয়াদ বাড়িয়ে দিতে পারেন। আবার তদন্তের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট না হলে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বদলও করতে পারেন।  

পুলিশি প্রতিবেদন কীঃ অপরাধের তদন্ত শেষে অভিযোগ বিষয়ে আদালতে দাখিল করে প্রতিবেদনের নামই পুলিশি প্রতিবেদন। ফৌজদারী কার্যাবিধিনুসারে তদন্ত শেষ করে পুলিশ দুই ধরণের রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে পারেন। অভিযুক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে যদি পুলিশি তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয় তবে পুলিশ আসামীদের সংশ্লিষ্ট আইনানুযায়ী অভিযুক্ত করে চার্জশিট জমা দিতে পারে অথবা তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (Final Report) দাখিল করতে পারেন। পুলিশ তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট তা গ্রহণ করতে বাধ্য নন। তাই কোন মামলায় পুলিশ আসামীদের বিরুদ্ধে ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান করলেও হতাশার কিছু নেই বরং তদন্তে অযাচিত প্রভাব পড়তে পারে জেনে আইনেও তাই তা থেকে প্রতিকার পাওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।  

কিভাবে নারাজি দিবেনঃ তাই যদি আপনি মনে করেন আপনার করা মামলায় পুলিশ নিরপেক্ষ এবং পক্ষপাতহীনভাবে তদন্ত সম্পন্ন করেনি তাহলে সে তদন্তের বিরুদ্ধে আপত্তি এবং অসন্তুষ্টি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে দরখাস্তাকারে নারাজি আবেদন পেশ করতে পারেন। মানে পুলিশি প্রতিবেদন মেনে নিতে আপনি রাজি নন মর্মে একখানা দরখাস্ত রুজু করবেন। অর্থাৎ পুলিশের দাখিলকৃত প্রতিবেদন আপনি কেন সঠিক মনে করছেন না সে কারণ দর্শিয়ে কিংবা আপনার নিকট যদি পুলিশ রিপোর্ট প্রভাবিত হওয়ার স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণাদি থেকে থাকে তবে তা সংযুক্ত করে ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পুনরায় অথবা অধিকতর তদন্তের আবেদন জানাতে পারেন। নারাজি আমলে নেয়ার ফলাফলঃ আপনার নিকট থেকে আবেদন প্রাপ্ত হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আসামী পক্ষ এবং তদন্তকারী কর্মকর্তাকে শুনানি করে যদি মনে করেন সংশ্লিষ্ট ঘটনার ক্ষেত্রে আসামীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন না দিয়ে চার্জ শিট দেয়া উচিত ছিল অথবা তদন্ত রিপোর্ট থেকে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কোন আসামীর নাম বাদ পড়েছে অথবা কারও নাম যোগ হওয়া উচিত ছিল তবে তিনি নারাজি দরখাস্তখানির গুরুত্ব বিবেচনা করে সেটিকে নালিশি দরখাস্ত হিসেবে গণ্য করে বিষয়টি তৎক্ষণাৎ তাঁর আদালতে নালিশি মামলা (Complaint Case) হিসেবে নথিবদ্ধ করে আবারো ঘটনা তদন্তে আদেশ দিতে পারেন। কিংবা তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ঘটনাটি পুনরায় শুরু থেকে তদন্ত (Re-investigation) করার অথবা অধিকতর তদন্ত (Further Investigation) করতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়ে বিষয়টি আবারো থানায় ফেরত পাঠাতে পারেন অথবা পূর্বের তদন্তকারী কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করে দিতে পারেন।

অথবা ফরিয়াদির আবেদনের সত্যতা নিরূপণে আবেদনকারীকে শপথগ্রহণপূর্বক পরীক্ষা করে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে সন্তুষ্ট হলে আসামীর বিরুদ্ধে সমন জারি করতে পারেন অথবা ক্ষেত্র বিশেষে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করতে পারেন। তবে আদালত চাইলে অপরাধের নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে তিনি নিজে বা তাঁর অধস্তন কোন ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করাতে পারেন। এ সময় তিনি বিষয়টি নিশ্চিত হতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ দিয়ে স্থানীয় তদন্তও করাতে পারেন। বিচার বিভাগীয় তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে তখন আসামীর বিরুদ্ধে সমন জারি অথবা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। এক্ষেত্রে তদন্তকালীন সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তার কোন গাফিলতি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আদেশ দিতে পারেন অথবা ওই পুলিশ কর্মকর্তার কাজের মূল্যায়নের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে বিষয়টি সংযুক্ত করতে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আদেশ দিতে পারেন। তবে মামলাটি ঠিকমতো তদন্ত করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে ম্যাজিস্ট্রেট মামলার বিভিন্ন নথিপত্র, কেস ডায়েরি ইত্যাদি আমলে নিতে পারেন।  

নারাজি খারিজ হলে করণীয়ঃ উভয় পক্ষকে শুনে এবং মামলার প্রয়োজনীয় সকল নথিপত্র যাচাই করে ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন পুলিশি তদন্তের বিরুদ্ধে নারাজির কোন ভিত্তি নেই তবে তিনি নারাজি দরখাস্ত খারিজ করে দিয়ে পুলিশি তদন্তের ওপর ভিত্তি করে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারেন। নারাজি আবেদন খারিজ হলে খারিজাদেশের বিরুদ্ধে আবেদনকারী ৬০ দিনের মধ্যে দায়রা জজ আদালতে অথবা হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন আবেদন দায়ের করতে পারেন। আর যদি নারাজি আবেদন অগ্রাহ্য করে ম্যাজিস্ট্রেট আসামীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন না করেই সরাসরি আসামীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেন তবে আবেদনকারী বিষয়টি নিয়ে পুনরায় নালিশি মামলা রুজু করতে পারেন থানায় নতুন করে এজাহার দায়ের করতে পারেন।  

সতর্কতাঃ আদালতের কাছে যদি প্রমাণিত হয় কেউ অযথা, মিথ্যা কিংবা হয়রানিমূলকভাবে নারাজি দিয়েছে তবে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। তাই ঘটনা সম্বন্ধে নিশ্চিত না হয়ে অযথা নারাজি দেয়াও ঠিক নয়।  

শেষ কথাঃ পুলিশি প্রতিবেদনে তাই আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিকভাবে উপস্থাপিত না হলে বিচলিত না হয়ে অথবা নিজেকে অসহায় মনে না করে নারাজি আবেদন দাখিলের আশ্রয় নিতে পারেন। প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে আসামীপক্ষ পুলিশি প্রতিবেদন থেকে রেহাই পেলেও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আপনি ঘটনা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেননা। কারণ আসামী আইনের ফাঁক গলিয়ে পালাতে চাইলেও আইনই অবিচারের পথ রুদ্ধ করে ন্যায় বিচারের দুয়ার উন্মুক্ত করেছে।

Tuesday, March 27, 2012

Constitutionality of mobile courts during Hartal

The current Awami League-led government deployed mobile courts on June 11 under the Mobile Court Act, 2009 to prevent anarchy (according to them) during hartal for the first time in the history of independent Bangladesh. BNP politicians alleged that, this type of suppression was done in Pakistan period especially during Ayub Khan’s time. Mobile courts arrested and summarily tried picketers all over the country when the main opposition Bangladesh Nationalist Party enforced a two-day long hartal on June 12 and 13. During the strike, executive magistrate of mobile court took cognisance and instantly meted out punishment to over 100 people all over the country.

Mobile courts were brought out again during the 48-hour hartal called by the BNP and its allies on July 6 and 7. Awami League politicians as well as the home minister and the authorities concerned all mentioned their obligation to maintain peace and affirmed that ensuring public security at any cost was their prime concern. More government officials than one assured that the use of mobile courts during hartal is lawful as the Mobile Court Act 2009 was passed through the legislature by the people’s representatives.
The Mobile Court Act: The Mobile Court Act, 2009 was brought into force on February 24, 2009. Prior to this act, a similar ordinance was passed by the caretaker government in 2007. The act was highly appreciated when this was implemented to prevent stalking and sexual harassment of women and adulteration of victuals. Now, the same law is being criticised by rights activists, lawyers, and politicians for the violation of general principles of law and suppression of political activists and even uninvolved citizens.
According to section 6(1) of the act, the magistrate can only try a person if the culpability falls under the offences specified in the schedule of the act and if the magistrate catches him red-handed and if he confesses to his crime.

In accordance with section 7(1), after taking cognisance, the magistrate will frame written charge against the offender and ask whether he confesses to his crime and, if he doesn’t, ask for explanation. The magistrate can punish by imprisonment or fine or both if the wrongdoer confesses.

Constitutionality of mobile court: Our constitution guarantees freedom of assembly and association in Articles 37 and 38 respectively. In a democratic society, general strike is legal unless and until it is declared illegal by an enactment or by the intervention of the court.
Article 32 of the constitution has a provision regarding personal liberty. The government cannot curtail citizens’ right to liberty without a lawful explanation; it doesn’t have the authority to confine a person without any valid reason, not even for a second.
Again, Article 31 of the constitution provides that the citizens have equal right to get the protection of the law. The government cannot legally prevent a party or a body that wishes to peacefully observe a strike.
In addition, Article 33 provides safeguards against arrest and detention. Bail is a mandatory provision, even for some cases of grievous offence, to ensure natural justice. However, bail is the name of an abstract dream to someone who is convicted instantly, on the spot, without adherence to definite rules of investigation, witness, examination, cross-examination and providing evidence.
Moreover, Articles 35(3) and (4) of the constitution provides the right to obtain fair and open trial by a competent forum and protection from providing evidence against himself. But the sole means to punish the accused under mobile court law is if the accused testifies against himself, which makes it extra-constitutional.
During hartal, opposition leaders were confined either at their office or at their residence by platoons of members of law enforcing agencies. It was nothing but a violation of the right to free movement, a fundamental right guaranteed in Article 36 of the constitution.
Another established principle of natural justice is that every person shall have the right to defend himself before punishment and can appoint a lawyer to this end. However, in this case, the law has no provision of self-defence, which is a grave violation of the general principles of law and human rights as well.
A further incongruous stipulation of this act is that the magistrate who will take cognisance and frame charge will himself conduct trial. There is no precedent in the world of the same person bringing the allegation and trying the accused.
Sections 186 and 353 of the penal code provide for action against obstruction to government duty and govt. can enforce these provisions.

Executive versus judiciary: Mobile court is not a proper forum, because here, the government applies its executive power to try, which contravenes the principle of separation of power and independence of judiciary. This creates a scope of abuse of judicial power by the executive.
Furthermore, there is a possibility of this instrument being exploited for personal vengeance and we have already heard of some cases where the executive magistrate allegedly used the power vengefully.
The government argues that the law enacted by the House is valid, without doubt. But it may have forgotten that a law passed by parliament, if inconsistent with the spirit of the constitution, shall be void to that extent of inconsistency [Article 7(2)].

Experiences of Hartal and mobile court: There is widespread allegation of innocent people being convicted through it. During the strike on June 12 and 13, many picketers were tried by the mobile court at the police station. It is a complete violation of Sections 6(1), 7(1), (2), (3), (4) and 11 the Mobile Court Act 2009, because according to these provisions, executive magistrate and district magistrate has the authority only to set up a court within their local territorial jurisdiction. They can pronounce sentences only at the moment of occurrence and for offences performed in their presence. However, at the time hartal, the police arrested people and brought them to the station where they were tried instead of at the place of occurrence.
In Bangladesh, people are often harassed by law enforcement agencies and now the Mobile Court Act itself has opened the doors of harassment in a supposedly legal way.

Sunday, March 18, 2012

থানায় মামলা নিতে না চাইলে যা করবেন


আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটনের পর কেউ থানায় মামলা করতে চাইলে পুলিশ বিনামূল্যে সে মামলা নিতে বাধ্য। কিন্তু বাস্তবে প্রায়ই এমন অভিযোগ শোনা যায় যে, পুলিশ থানায় মামলা নিতে চায় না। কোন কারণে পুলিশ যদি কখনো থানায় মামলা নিতে না চায়, তাহলে সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিচারিক হাকিমের আদালতে নালিশি অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের বিচার চেয়ে মামলা দায়ের করা যায়। তবে সংঘটিত অপরাধ আমল অযোগ্য হলে সবসময়ই সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট নালিশি মামলা দায়ের করতে হয়। আমল অযোগ্য অপরাধ হলো সেই সমস্ত অপরাধ যে সকল অপরাধ সংঘটনের দরুণ পুলিশ বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারে না এবং এ সকল অপরাধ বিষয়ে তদন্ত করতেও সংশ্লিষ্ট বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয়। কোনটি আমলযোগ্য এবং কোনটি আমলঅযোগ্য অপরাধ তা ফৌজদারী কার্যবিধির দ্বিতীয় তফশীলের তৃতীয় কলামে বিধৃত করা রয়েছে।
ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী নালিশ মানে হলো কোন অপরাধ সংঘটন বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার নিমিত্তে মৌখিক বা লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট বিচারিক হাকিমের নিকট আবেদন জানানো। যদি কোন আমলঅযোগ্য অপরাধ সংঘটনের খবর কেউ সংশ্লিষ্ট থানায় নিয়ে যায় তবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (O.C) বিষয়টি সাধারণ ডায়েরিতে (G.D) লিপিবদ্ধ করে অভিযোগসহ অভিযোগকারীকে মহানগরের ক্ষেত্রে মুখ্য মহানগর হাকিম বা মহানগর হাকিম এবং মহানগরের বাইরের এলাকার ক্ষেত্রে মুখ্য বিচারিক হাকিম বা কোন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট অথবা বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করবেন। এক্ষেত্রে থানায় না যেয়ে সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট যেয়েও লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার প্রার্থনা করা যায়। অথবা পুলিশ যদি আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটনের পর থানায় এজাহার নিতে অস্বীকৃতি জানায় সেক্ষেত্রেও সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট নালিশি মামলা দায়ের করা যায়।
ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতিঃ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট মৌখিকভাবে অভিযোগ দায়ের করতে চাইলে ঘটনার আদ্যোপান্ত আদালতে খুলে বলে ঘটনার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আবেদন করতে হবে। তারপর দায়েরকৃত অভিযোগের কোন ভিত্তি আছে কি-না তা পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগকারীকে এবং প্রয়োজন মনে করলে ঘটনার কোন সাক্ষী থাকলে তাঁদেরকে শপথের মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন। পরীক্ষার সারসংক্ষেপ লিখে তিনি নিজে, অভিযোগকারীর এবং কোন সাক্ষী থাকলে তাঁর স্বাক্ষর নিবেন। তবে কেউ দরখাস্তাকারে ঘটনার পূর্ণ বিবরণসহ লিখিত অভিযোগ দায়ের করে প্রতিকার দাবী করলে এরূপ পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত পরীক্ষায় সন্তুষ্ট হলে বা লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগটিকে একটি সি.আর কেস নম্বর (Complaint Register case number) বা সি.আর.পি কেস নম্বর (Complaint Register Petition case number) দিয়ে নথিভুক্ত করবেন। এজন্য একে সি.আর মামলাও বলে।
তবে শপথ পরীক্ষার সময় সংশ্লিষ্ট বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট যদি অপরাধ সংঘটন বিষয়ে অভিযোগকারীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট না হন অথবা যদি অভিযোগকারী মামলার ভিত্তি (Prima facie) প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন তবে ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি আমলে না নিয়ে আবেদনটি খারিজ করে দিতে পারেন। নালিশি পিটিশনটি খারিজ হলে অভিযোগকারী খারিজাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে দায়রা জজ আদালতে বা হাইকোর্ট বিভাগে উক্তাদেশ ঘোষণার ৬০ দিনের মধ্যে রিভিশনের আবেদন করতে পারেন।
অভিযোগ আমলে নেয়ার ফলাফল ও তদন্তে প্রেরণঃ অভিযোগটি আমলে নিলে ম্যাজিস্ট্রেট বিবাদী পক্ষের বিরুদ্ধে সমন জারী করে আদালতে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য উপস্থাপনের নির্দেশ দিতে পারেন অথবা আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নিতে থানাকে নির্দেশ দিতে পারেন। ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট থেকে আদেশপ্রাপ্ত হলে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগটি থানায় এজাহার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে মামলার জন্য প্রয়োজনীয় পরবর্তী পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করবে। আবার অআমলযোগ্য অপরাধের বেলায় বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত করতে ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশকে নির্দেশ দিতে পারেন। এক্ষেত্রেও আদিষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অভিযোগটি বিষয়ে তদন্ত শুরু করবে এবং তদন্তকালীন সময়ে আমলযোগ্য অপরাধ তদন্ত করার মতোই ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবে। অভিযোগের তদন্ত শেষে পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিলে কিংবা অভিযোগের কোন ভিত্তি খুঁজে না পেলে পুলিশের দাখিলকৃত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী নারাজি দিতে পারেন অর্থাৎ পুলিশ প্রতিবেদনে তিনি কেন সন্তুষ্ট নন আদালতে সে কারণ দর্শীয়ে অভিযোগটির পুনঃতদন্তের আবেদন করতে পারেন।
তবে প্রয়োজন মনে করলে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য অথবা অধিকতর তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার উদ্দেশ্যে তিনি নিজে বা তাঁর অধস্তন অন্য কোন ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দিতে পারেন। অভিযোগটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরও তদন্ত কার্যে সম্পৃক্ত করতে পারেন।
মনে রাখা জরুরিঃ নালিশি মামলার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, এক্ষেত্রে রাষ্ট্র প্রথম থেকেই পক্ষ হয়ে মামলা শুরু করে না। যেমনটা থানায় এজাহার রুজুর মাধ্যমে মামলা দায়ের করলে রাষ্ট্র নিজে পক্ষভুক্ত হয়ে পরবর্তীতে মামলা পরিচালনা করে। ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নেয়ার আদেশ দিলে রাষ্ট্র তখন মামলার পক্ষ হয়ে পরবর্তীতে মামলা পরিচালনা করে। তাই নালিশি মামলার ক্ষেত্রে কেউ অভিযোগ দায়ের করে পরবর্তী শুনানির দিন যদি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির না হন কিংবা ঘটনা তদন্তান্তে যদি অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত না হয় তবে ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি খারিজ করে দিতে পারেন। অভিযোগকারী চাইলে এ ধরনের খারিজাদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতে বা হাইকোর্ট বিভাগে উক্ত আদেশ ঘোষণার ৬০ দিনের মধ্যে রিভিশন আবেদন করতে পারেন। নালিশি মামলা সাধারণত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিই রুজু করতে পারেন।
শেষ কথাঃ কাজেই থানায় কখনও মামলা নিতে না চাইলে বিচলিত হয়ে নিজেকে অসহায় ভাবার কোন কারণ নেই। আইনানুযায়ী যে কেউই এরকম পরিস্থিতিতে সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে নালিশি মামলা দায়ের করে আইনের আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারেন। তবে আমাদের দেশের বাস্তবতায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসহায় ও দরিদ্র বিচারপ্রার্থীরা থানায় আইনের আশ্রয় না পেলে পুলিশকে টপকে অজ্ঞতা, দৈনতা ও নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার দরুণ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না। জনগণের ন্যায় বিচার পাবার অধিকার নিশ্চিত করতে তাই এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের আইনগত সহায়তা প্রদান কর্মসূচীও ব্যাপক পরিসরে বাড়ানো উচিত। নিবন্ধটি ১৮-০৩-২০১২ তারিখের প্রথম আলোর আইন অধিকার পাতায় প্রকাশিত।

Sunday, March 4, 2012

গৃহশ্রমিকদের অধিকার কতদূর...

গৃহশ্রমিকের ওপর নির্যাতন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু দিন দিন গৃহশ্রমিকদের প্রতি পাশবিক অত্যাচার ও নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ বছরে গৃহশ্রমিকের ওপর ৭৯৮টি নির্যাতনের ঘটনায় ৩৯৮ জন মারা গেছে। শুধু গত বছর ১২ অক্টোবর পর্যন্ত মারা গেছে ৩৩ জন।
গণমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিন এ রকম একেকটি পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশিত হচ্ছে। তার মধ্যে গৃহকর্মী শিশু হাসিনা (১১), তানিয়া আক্তার (১০), রোমেলা খাতুন (১০), রাশিদা বেগমের (২৪) ওপর চালানো শারীরিক নির্যাতন আমাদের হতবিহ্বল করে দেয়। হাসিনার শরীরের প্রতিটি ইঞ্চিতে ছিল জখমের চিহ্ন। রোমেলা নির্যাতনের শিকার হয় সীতাকুণ্ড থানার উপ-পরিদর্শক শাহেদ আলী ও তার স্ত্রী সুইটি বেগমের বাসায়। রোমেলা বলেছে, একবার পিটুনিতে মুখ কেটে গেলে সুইটি বেগম সুঁই-সুতো দিয়ে তা সেলাই করে দেয়। তানিয়ার তো জীবনপ্রদীপই নিভে গেল। সর্বশেষ গত ১৬ ডিসেম্বরে রাশিদা বেগমকে রাজধানীর শাহবাগ থানার আনন্দবাজার এলাকায় একটি বাড়ির তিন তলা থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগ পাওয়া যায়। কাজ করতে দেরি হওয়ায় গৃহকর্ত্রী রাশিদাকে তিন তলা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
এভাবে একের পর এক গৃহকর্মী নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলেছে। নির্যাতনকারী বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী হওয়ায় দরিদ্র, অসহায় নির্যাতিত এসব মানুষ নূ্যনতম বিচার পাচ্ছে না। যেন গৃহশ্রমিকরা মানুষ নয়, তারা যেন মালিকের কেনা সম্পত্তি।
দেশের সিংহভাগ ক্ষেত্রে দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠী জীবিকার তাগিদে গৃহকর্মে সহযোগিতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা অসহায়, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্ত নারী অথবা মেয়ে শিশু। ২০০৬ সালে পরিচালিত এক জরিপ থেকে জানা যায়, দেশে যে ২ মিলিয়ন শিশু শ্রমভিত্তিক কাজে নিয়োজিত তার মধ্যে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ গৃহকর্মে নিয়োজিত। এদের মধ্যে ৭৮ শতাংশই মেয়ে শিশু এবং ৯৪ ভাগ পূর্ণকালীন কাজ করে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশে বর্তমানে গৃহশ্রমিকের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি।
তারা কাজ করে দিনে প্রায় ১১-১২ ঘণ্টা। কাজের তুলনায় এদের বেতন খুবই সামান্য। ৬০ শতাংশ নিয়মিত বেতন পায়, বাকি ৪০ শতাংশ অনিয়মিত। এসব গৃহশ্রমিক দিনভর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করলেও বিনিময়ে কিছু সুযোগ-সুবিধা তো দূরের কথা, সহানুভূতিটুকুও পায় না। গৃহকর্মীদের কাজের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। কাকডাকা ভোরে তারা কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মধ্যরাতে অবসর মেলে। অসুস্থ অবস্থায় এমনকি গর্ভকালীন অবস্থায়ও তাদের ছুটি মেলে না। তাদের নেই ট্রেড ইউনিয়ন করার বিধান। বাংলাদেশের শ্রম আইন গৃহশ্রমিককে শ্রমিকের অন্তর্ভুক্ত করেনি। গৃহপরিচারিকাদের কাজের সময় কোনো নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না। তাই মালিকের ইচ্ছা ও সন্তুষ্টির ওপর চাকরি নির্ভর করে।
বিলসের সূত্র অনুযায়ী, গৃহকর্মীদের রাত যাপনের নির্দিষ্ট কোনো ঘর নেই। পত্রিকার পাতা খুললে প্রায় দিনই গৃহকর্মীদের ওপর যৌন নিপীড়নের খবর পাওঢা যায়। সিংহভাগ ক্ষেত্রে এর জন্য দায়ী গৃহকর্তা বা তার কোনো আত্মীয়। কালেভদ্রে যৌন নিপীড়ন বা শারীরিক নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হলে লোক দেখানো চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং অর্থের বিনিময়ে আপসের ব্যবস্থা করা হয়। শিশু গৃহকর্মী সারাক্ষণ কাজের মধ্যে থেকে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত বঞ্জিত হচ্ছে।
গৃহকর্মীদের জন্য দেশে একটি মাত্র আইনই বিদ্যমান। তাও নিবন্ধন সংক্রান্ত। এ আইনের অধীনে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। আইনটি সম্বন্ধে অনেকে জানেনও না। আইনটি হলো গৃহপরিচারিকা নিবন্ধন অধ্যাদেশ-১৯৬১। আইনটি শুধু ঢাকা সিটি করপোরেশনে প্রযোজ্য। আশার কথা, সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় ২০০৯ সালে এনজিও কর্মীদের সমন্বয়ে গৃহশ্রমিকদের বিভিন্ন অধিকারের সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে 'গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা' নামে খসড়া একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। খসড়া প্রণয়নের ২ বছর অতিক্রান্ত হলেও বিবিধ অজুহাতে সরকার এখনও খসড়া নীতিমালাটি কার্যকর করছে না। নীতিমালা অনুযায়ী, ১৪ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে গৃহকাজে নিয়োগ করা যাবে না। কোনো গৃহকর্মীকে তালাবদ্ধ করে রাখা যাবে না। তবে তার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বাড়ি তালাবদ্ধ করতে হলেও একটি চাবি তার কাছে রাখতে হবে।
বয়স ও সামর্থ্যের সঙ্গে অসামঞ্জস্য বিবেচিত ভারী ও বিপজ্জনক কাজে কিশোর-কিশোরীদের নিয়োগ করা যাবে না। দেশের সব সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কার্যালয়, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ গৃহশ্রমিকদের নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হবে। নীতিমালায় গৃহকর্মীর ছবিসহ পরিচয়পত্র ও সপ্তাহে কমপক্ষে এক দিন ছুটির কথা বলা হয়েছে। গৃহকর্মী হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হলে সুবিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। গর্ভকালীন ও প্রসূতিকালীন সুবিধা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করার কথাও নীতিমালায় বলা আছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত নারীর এ গৃহশ্রম ও পরিবারকে ভালোবেসে যে শ্রম প্রদান করে তাকে 'ভালোবাসার অর্থনীতি' আখ্যায়িত করে ভালোবাসার অর্থনীতির আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করেছেন প্রায় ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। জিডিপিতে এই মূল্যমান যোগ করা হলে জিডিপি বেড়ে দাঁড়াবে ৭ লাখ ১৭ হাজার ১২ কোটি টাকা। এ হিসাবের ভিত্তি হলো বাংলাদেশে ১০ বছর ও তদূর্ধ্ব নারীরা গৃহস্থালি কাজে বছরে সময় ব্যয় করেন ১৬ হাজার ৬৪১ কোটি শ্রমঘণ্টা।
তবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪, ১৫, ১৭, ২৮ (৪) ও ৩৪ অনুচ্ছেদ গৃহশ্রমিকের অধিকার প্রচ্ছন্নভাবে হলেও রক্ষা করেছে। কেবল আইন করে বা আইন প্রয়োগ করে গৃহশ্রমিকের ওপর নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়। মানবিক মূল্যবোধ, সহানুভূতি ও সামাজিক সচেতনতাই এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। পাশাপাশি সরকারি কিছু পদক্ষেপ নির্যাতন নিরোধে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে। আর সেই সঙ্গে গৃহশ্রমিকদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতনতা তাদের জন্য বয়ে আনতে পারে মুক্তির বার্তা।
 লেখাটি সমকালের ২৬-০২-২০১২ তারিখের নারীস্থান পাতায় প্রকাশিত।

Friday, February 10, 2012

আইন আদালতে উপেক্ষিত বাংলা ভাষা

লেখাটি যুগান্তরে ১০-০২-২০১২ তারিখে উপসমাদকীয় হিসেবে প্রকাশিত।
উচ্চ আদালতে ভাষা হিসেবে বাংলার ব্যবহার যে চরমভাবে অবহেলিত সে কথা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেইকালেভদ্রে দুএকজন বিচারপতির বাংলায় রায় লেখার মধ্যেই এখন বাংলা চর্চা সীমাবদ্ধএখনো পর্যন্ত উচ্চ আদালতে ব্যাপকভাবে বাংলার প্রচলন ঘটেনিউচ্চ আদালতে বাংলার জন্য দুয়ার না খোলায় সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেনআদালত বন্দি হয়ে থাকছে কেবল উচ্চবিত্তের তরেএর কারণ হিসেবে অনেকেই আদালত পাড়ায় ভাষা হিশেবে বাংলার সীমাবদ্ধতার কথা বলে এড়িয়ে যেতে চান, কিন্তু কেউকে এ বিষয়ে কার্যকর কোন উদ্যোগ নিতেও দেখা যায় না

ভাষা আন্দোলনের মাস এলেই কেবল বিষয়টি আলোচনায় আসে এবং এ বিষয়ে আমাদের আবেগ উথলে পড়ে। আবার ফেব্রুয়ারির বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে তা স্তিমিত হয়ে পড়েভাষা আন্দোলনের যে স্ফূলিঙ্গ ৫২-তে ছড়িয়েছিল তার চেতনা কিন্তু এরকম ছিল নাবরং সর্বস্তরের বাংলার প্রচলনের নিমিত্তেই ভাষা শহীদরা নিজেদের আত্মোৎসর্গ করেছিলেন

মামলার রায় অধিকাংশ সময়ই ইংরেজিতে দেয়ার কারণে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে আদালতের কথার মর্ম ঠিকমতো উপলব্ধিও করা সম্ভব হয় না। ফলে জনস্বার্থে দায়ের করা মামলাগুলোতে যুগান্তকারী রায় পাওয়া গেলেও কেবলমাত্র ভাষার সীমাবদ্ধতার কারণে এদেশের গণমানুষ তার সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উচ্চ আদালতের রায়গুলি বঙ্গানুবাদ করে জনমানুষের জন্য আইন ও বিচারের বাণী সহজলভ্য করতে সরকারের এখনই উদ্যোগ নেয়া উচিত।

আইনকে সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষার উপযোগী করে ব্যবহার করতে হলে সর্বস্তরে বাংলার প্রচলনের বিকল্প নেইতাই আইন শিক্ষা থেকে শুরু করে বিচারের শেষস্তর পর্যন্ত সর্বত্র বাংলার পরিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা দরকারযথাযথ গবেষণার ব্যবস্থা করা হলে তা বেশি সময়সাপেক্ষ হবে নাবরং সহজ বাংলার ব্যবহার আইনকে আরো মাধুর্যময় করবেআইন তখন আর কোনো খটমটে দুর্বোধ্য বিষয়ে পরিণত হবে না। তবে ভাষান্তরের ক্ষেত্রে সহজ এবং সকলের জন্য বোধগম্য শব্দ চয়ন করার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। আইনি শব্দকোষ থেকে শুরু করে স্বল্প পরিসরে মূল আইনগুলি বাংলায় ভাষান্তরের কারণে ইতোমধ্যে প্রাণহীন আইনও যথেষ্ট সরস হয়ে উঠেছেএখন প্রয়োজন শুধু বাংলার জন্য রুদ্ধ দুয়ার উন্মুক্ত করা এবং নিরবচ্ছিন্ন চর্চা চালিয়ে যাওয়া

তবে একথাও সত্য যে, আইনি অনেক শব্দের পরিভাষা বাংলায় নেই বা অন্যান্য ভাষার তুলনায় বাংলায় আইন বিষয়ক শব্দের ভাণ্ডার খুব বেশি সম্বৃদ্ধ নয়। আইনি পরিকাঠামোর মধ্যে ভাষার সব দ্যোতনাও বাংলায় সব সময় সঠিকভাবে প্রকাশ করা কষ্টসাধ্যকিন্তু এ সমস্যা সমাধানে সরকারি কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে নাআইনের পারিভাষিক শব্দগুলোর অভিধান তৈরি করে এ সমস্যার সমাধান করা যেতে পারেব্যবহার করতে করতেই এক সময় পরিভাষা দাঁড়িয়ে যায়

তাছাড়া এখন তো আইনগুলো আইনসভা বাংলাতেই প্রণয়ন করছেতাহলে উচ্চ আদালতে বাংলা প্রচলনকে সমস্যা কোথায়? এটা এক ধরনের মানসিক সমস্যাও বটেঅনেকে উচ্চ আদালতে ইংরেজি ব্যবহার করে এক ধরনের দম্ভ প্রকাশ করেনএটা ঔপনিবেশির মানসিকতারই একটি অংশআমরা এখনো পরিপূর্ণভাবে নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি অন্তরে ধারণ করতে পারিনিউচ্চ আদালতের পাশাপাশি নিম্ন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতির জন্য কমপক্ষে তিনটি মামলার রায় ইংরেজিতে লেখার নিয়মও আদালতে বাংলার সার্বিক প্রচলন বাধাগ্রস্ত করছে

দেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ 'বাংলা ভাষা প্রচলন আইন' করা হলেও তা বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষীত হচ্ছেনাবাংলা ভাষা প্রচলন আইনের ৩(১) ধারায় বলা হয়েছে, এই আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারী অফিস-আদালত, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সাথে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন আদালতের সওয়াল জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগ কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখিতে হইবেএই ধারা মোতাবেক কোন কর্মস্থলে যদি কোন ব্যক্তি বাংলা ভাষা ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় আবেদন বা আপীল করেন তাহা হইলে উহা বেআইনি ও অকার্যকর বলিয়া গণ্য হইবে

আইনটি প্রণয়ন করার দীর্ঘ সময় পর ১৯৯৮ সালের শেষ দিকে বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে 'বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষ' গঠন করা হয়কোষের কর্মপরিধির মধ্যে অন্যতম ছিল ব্রিটিশ আমল থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও আদালতে প্রযোজ্য ইংরেজিতে প্রণীত আইন বাংলা ভাষায় রূপান্তর। কিন্তু পরবর্তীতে সে কার্যক্রমও গতি হারিয়ে ফেলে।

রাষ্ট্রীয় কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৮০০টি আইনের মধ্যে বিগত ১৪ বছরে মাত্র ১০৭টি বাংলায় অনূদিত হয়েছে গত বছর সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সশস্ত্র বাহিনীর ৪০টিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৬৫টি আইন বাংলায় রূপান্তরের কাজ চালাচ্ছে২০০৭ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ কোডে ১৮৩৬ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ২৬ খণ্ড এবং ১৯৮৭ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ১২ খণ্ডসহ মোট ৯৫৫টি আইনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়এর মধ্যে ২৬ খণ্ডের ৭৫০টি আইন ইংরেজি ভাষায় লেখাএসব আইনের মধ্য মাত্র ১০০টির মতো আইন গত ১৪ বছরে ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তর করা সম্ভব হয়েছে

গেল বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি আইন কমিশন আদালতে বাংলা ভাষা প্রচলনের উদ্দেশ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে এক সুপারিশ পেশ করলেও আর একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের প্রাক্কালেও তা বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে কোনরূপ আন্তরিকতা এখন পর্যন্ত দেখা গেল না আইন কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছিল, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে আইন বিভাগ তথা জাতীয় সংসদ এবং নির্বাহী বিভাগ সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদের বিধান ও ১৯৮৭ সালের আইনের বিধান পুরোপুরি অনুসরণ করছেনিম্ন আদালতেও তা অনুসরণ করা শুরু হয়েছিলকিন্তু হাশমত উল্লাহ বনাম আজমিরি বিবি ও অন্যান্য মামলায় (৪৪ ডিএলআর ৩৩২-৩৩৮, অনুচ্ছেদ ২০) হাইকোর্ট বিভাগ রায় দিয়েছেন, সরকার অধস্তন দেওয়ানি আদালতের ভাষার ব্যাপারে দেওয়ানি কার্যবিধির ১৩৭(২) ধারায় কোনো ঘোষণা দেয়নি বিধায় বাংলা ভাষা প্রচলন আইন জারি করা সত্ত্বেও অধস্তন দেওয়ানি আদালতের কার্যক্রম ইংরেজি ভাষায় চলমান রাখা যাবে

ফলে আজ অবধি বিচারকাজে বাংলা ভাষা পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হয়নি অনুরূপ বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫৮ ধারায়ও একইরূপ বিধান বিদ্যমান রয়েছে। আদালতে বাংলার সর্বময় ব্যবহার নিশ্চিত করতে এ আইন দুটির সংশ্লিষ্ট বিধানদ্বয়ও শিগগির পরিবর্তন করা জরুরি।

দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার মর্যাদা নির্ধারণ করে দিলেও  সে সংবিধান রক্ষা করার গুরুদায়িত্ব যে বিচার বিভাগের ওপর ন্যাস্ত সেই সর্বোচ্চ আদালতের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গনে বাংলার স্বল্প ব্যবহার শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয় বরং বেদনাদায়কও বটেআইনকে কেবল রাষ্ট্রের একটি শ্রেণীর মধ্যে গণ্ডিবদ্ধ করে রাখলে সে আইন এক সময় ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার হাতিয়ার থেকে ভ্রান্তিতে পরিণত হয়হাইকোর্ট নিজে নির্দেশনা দিয়ে শহীদ মিনার ও ভাষাসৈনিকদের মর্যাদা রক্ষার কথা বললেও এসব কিছুর প্রাণ সেই বাংলা ভাষাই উচ্চ আদালতে অবাধে বিচরণ করতে না পারলে সব আয়োজনই অর্থহীন হবেসাধারণ মানুষ যদি আইনি প্রক্রিয়া বুঝতেই না পারে, তাহলে সে আইন রাষ্ট্রের কল্যাণ কিংবা গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে কিভাবে?
লেখাটি যুগান্তরে ১০-০২-২০১২ তারিখে উপসম্পাদকীয় হিসেবে প্রকাশিত

Saturday, January 21, 2012

এজাহার দায়ের করবেন যেভাবে


ঘটনা ১- রংপুরের রফিকুল ইসলাম তার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ভোরে ঢাকার গাবতলী পৌঁছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। তিন-চারজন ছিনতাইকারী মুহূর্তেই তাদের সর্বস্ব লুট করে নেয় এবং যাওয়ার সময় তার ভাইকে ছুরিকাঘাত করে যায়। ভাইয়ের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রফিকুল ইসলাম যখন পার্শ্ববর্তী থানায় মামলা করতে যান তখন থানা থেকে জানানো হয় মামলা দায়ের করতে হলে ঘটনার বিবরণসহ লিখিত অভিযোগ দাখিল করতে হবে।  রফিকুল ইসলাম দুশ্চিন্তায় পড়ে যান, কারণ তিনি পড়ালেখা জানেননা এবং আইনের এত মারপ্যাঁচও বোঝেননা। তখন থানায় উপস্থিত দালাল তাকে দুই হাজার টাকার বিনিময়ে এজাহার লিখে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। উপায়ন্ত না দেখে রফিকুল তাতেই রাজি হয়ে যান।

ঘটনা ২- সাতক্ষীরার সিরাজউদ্দিন তার মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে প্রতিবেশী বখাটে যুবক আসলাম মিয়াকে প্রধান আসামী করে সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার দায়ের করেছিলেন। কিন্তু মামলার এজাহারের দুর্বলতা, বিলম্ব ও পর্যাপ্ত সাক্ষীর অভাবে তার মেয়ের হত্যাকারীরা নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে এখন তারই সামনে দিয়ে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ায়। 

শুধু রংপুরের রফিকুল ইসলাম কিংবা সাতক্ষীরার সিরাজউদ্দিন নয়, ঠিকমতো এজাহার দায়ের করতে না পারায় প্রতিনিয়ত অনেকেই বিচার পাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে এজাহার দায়েরের মাধ্যমে অধিকাংশ মামলার সূচনা হয়। তাই পরবর্তীতে মামলার গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে এজাহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে পরিগণিত হয়। কিন্তু ঠিকঠাকমতো এজাহার রুজু করার জন্য পর্যাপ্ত আইনি জ্ঞান ও দক্ষতা না থাকায় প্রায়ই আমাদের রফিকুল ইসলাম/সিরাজউদ্দিনের মতো পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। তাছাড়া আইনগতভাবে এজাহার লেখার পদ্ধতিও যথেষ্ট জটিল।

এজাহার কীঃ অপরাধী ও সংঘটিত আমলযোগ্য অপরাধ বিস্তারিত বিবরণসহ শাস্তি দাবী করে বা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে থানায় অপরাধের সংবাদ লিপিবদ্ধ করাকে এজাহার বলে। যা FIR (First Information Report) বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণী নামেও পরিচিত। অপরাধ সম্বন্ধে এ বিবরণ প্রথম দেয়া হয় বলে একে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বলে। আমলযোগ্য অপরাধ (Cognizable offence) হচ্ছে সেই অপরাধ যে অপরাধের দরুণ অভিযুক্তকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যায়।

এজাহার লিখিত বা মৌখিক যেকোনভাবেই করা যেতে পারে। মৌখিক এজাহারের ক্ষেত্রে থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বিনামূল্যে ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ করে দিবেন এবং উক্ত ঘটনার বিবরণ তিনি তথ্য প্রদানকারীকে পড়ে শুনিয়ে আপত্তি না থাকলে তাতে তার স্বাক্ষর নিবেন। আর যদি তথ্য প্রদানকারী কোন সংশোধন আনতে চান তবে তা আনার পর স্বাক্ষর নিবেন। অন্যদিকে লিখিত এজাহারের বেলায় সংঘটিত অপরাধের বিস্তারিত বিবরণ স্বাক্ষরসহ দরখাস্ত আকারে সংশ্লিষ্ট থানায় দাখিল করতে হয়। প্রাপ্ত দরখাস্তের তথ্যাদি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এজাহারের জন্য নির্ধারিত বিপি ২৭ ফরমে তুলে মামলার জন্য প্রয়োজনীয় পরবর্তী পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করেন।  তবে কোন কারণে থানা এজাহার নিতে না চাইলে সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে নালিশি ( Complaint Register) মামলা রুজু করা যায়।

১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় এজাহার সম্পর্কে বলা হয়েছে - কোন থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারের (OC) নিকট কোন আমলযোগ্য অপরাধ সংঘঠিত হওয়া সম্পর্কে কোন সংবাদ মৌখিকভাবে প্রদান করা হলে তিনি বা তার নির্দেশক্রমে অন্য কেউ সাথে সাথে তা লিখে তথ্য প্রদানকারীকে পড়ে শুনাবেন এবং তথ্য প্রদানকারীর স্বাক্ষর নিবেন লিখিতভাবে প্রদত্ত সংবাদের ক্ষেত্রেও তথ্য প্রদানকারী  স্বাক্ষর করবেন এই তথ্য বিবরণী উক্ত অফিসার সরকার  কর্তৃক নির্দেশিত (বিপি ২৭) ফরমে লিপিবদ্ধ করবেন

তবে অপরাধের সংবাদটি বিস্তারিত না হলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে এবং পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী বাহিনী ঘটনা আমলে নিয়ে তদন্ত করতে পারবে। যেকোন ব্যক্তিই অপরাধ সংঘটন স্থলের নিকটবর্তী থানায় এজাহার রুজু করতে পারেন। এর জন্য তাকে ক্ষতিগ্রস্থ হবার প্রয়োজন নেই। তবে  আমলঅযোগ্য অপরাধের ঘটনা তদন্ত করতে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের পূর্বানুমতির প্রয়োজন পড়ে (দেখুনঃ রাষ্ট্র বনাম আবদুল গফফার মুন্সী এবং অন্যান্য, ৩৫ তম ঢাকা ল রিপোর্টের ৭৬ পৃষ্ঠা) ।

এজাহারে যেসব বিষয় উল্লেখ করতে হয়ঃ ঠিকমতো এজাহার করতে না পারায় অনেকেই বাধ্য হয়ে টাকার বিনিময়ে দালালের সাহায্য নেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী না হওয়ায় এজাহারে এ সকল দালালেরা ঘটনার প্রকৃত বিবরণ তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়। ফলস্বরূপ এজাহার দুর্বল হয়ে যায় এবং আসামির বিপক্ষে মামলা প্রমান করা কঠিন হয়ে পড়ে। এজাহার হলো ফৌজদারী মামলার ভিত্তি, তাই এজাহারে অপরাধী ও অপরাধের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ সতর্কতার সঙ্গে তুলে ধরতে হয়। এজাহারে তাই (১) সুস্পষ্টভাবে অপরাধীর নাম ও ঠিকানা (জানা থাকলে) উল্লেখ করা; (২) অপরাধের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা যৌক্তিকভাবে লিপিবদ্ধ করা; (৩) অপরাধ সংঘ্টনের তারিখ ও সময় উল্লেখ করা; (৪) অপরাধের সংঘটনস্থল উল্লেখ করা; (৫) অপরাধ সংঘটনের কোন পূর্ব সূত্র বা কারণ থেকে থাকলে তার বর্ণনা তুলে ধরা; (৬) সন্ধিগ্ধ ব্যক্তিদের সম্পর্কে ধারণা দেয়া; (৭) অপরাধ পরবর্তী অবস্থা যেমন -সাক্ষীদের আগমন, আহত ব্যক্তির চিকিত্‍সা ইত্যাদি সম্পর্কে বর্ণনা; (৮) সাক্ষীদের নাম, ঠিকানা ইত্যাদি উল্লেখ করা; (৯) অপরাধীদের কে বাধা দিয়ে থাকলে তার ধারাবাহিক বর্ণনা করা; (১০) কোন বিষয় তাত্‍ক্ষনিকভাবে লেখা সম্ভব না হলে পরবর্তীতে সে বিষয়টি সংযোজন করা হবে এমন একটি কৈফিয়ত রাখা প্রভৃতি বিষয়াবলী উল্লেখ করা জরুরি। এছাড়া এজাহার দাখিলে কোন কারণে বিলম্ব হলে যথাযথ ও যৌক্তিক কারণ দর্শানো এবং কোন ঘষা-মাজা, কাটা-কাটি করা না থাকা ভাল। যদিও ফৌজদারী অপরাধের কোন তামাদি নেই, তথাপি এজাহার দায়েরে বিলম্ব মামলার গুনগতমান বিনষ্ট করে।
এজাহারের ৫টি কপি করতে হয়, তন্মধ্যে মূল কপি কোর্টে, প্রথম কার্বন কপি পুলিশ সুপার এর নিকট, দ্বিতীয় কার্বন কপি থানায়, সাদা কাগজে অতিরিক্ত কপি সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপারের নিকট এবং  সাদা কাগজে অতিরিক্ত কপি এজাহারদাতার নিকট প্রেরণ করতে হয়।
এজাহার রুজুর পর পুলিশি দায়িত্বঃ পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি), ১৯৪৩ এর ২৪৩, ২৪৩(চ)২৪৫ প্রবিধান এবং ফৌজদারী কার্যবিধির, ১৮৯৮ ১৫৪ ধারানুযায়ীঃ আমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ শুনে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার FIR গ্রহণ হতে বিরত থাকতে পারবেন না এজাহার হলো জিআর (General register) বা পুলিশি মামলার মূল ভিত্তি তাই আমলাযোগ্য কোন অপরাধের সংবাদ পাবার সাথে সাথে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৭ ধারানুসারে তদন্ত আরম্ভ করতে হবে সংবাদাতা সংবাদটি লিখিতভাবে দিতে না চাইলে অথবা তা লেখা হলে তাতে স্বাক্ষর দিতে না চাইলে সংবাদটি জিডিভক্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে প্রাথমিক তথ্যদাতা  টেলিফোন/ফ্যাক্স/ইমেইল বা যোগাযোগের অন্যকোন মাধ্যম ব্যবহার করে এমনকি সংবাদপত্রের মাধ্যমে অবগত হয়ে কোন আমলযোগ্য অপরাধের  সংবাদ দিলে সংবাদদাতাকে থানায় এসে এজাহার রুজুর জন্য বলতে হবে এবং তার নাম, ঠিকানা, খবরের উৎস প্রভৃতি লিপিবদ্ধ করতে হবে, সংবাদদাতা থানায় না এলে সংবাদ গ্রহণকারী অফিসার নিজেই বিষয়টি FIR করে ব্যবস্থা নিবেন (ধারা-১৬৭) অপরাধ সংঘটনের সংবাদটি কোন আমলযোগ্য ঘটনার না হলে সেটি জিডি হিসেবে এন্টি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে সংবাদদাতা স্বাক্ষর না দেবার কারণে প্রয়োজনীয়  কার্যক্রম বন্ধ রাখা যাবে না সংবাদ পেলে ডাক্তারী কিংবা অন্যকোন প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট না পাওয়ার কারণে এজাহার বিলম্বিত করা যাবে না। ম্যাজিস্ট্রট আমলযোগ্য কোন অপরধা তদন্ত করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিলে ম্যাজিস্ট্রেটের প্রেরিত লিখিত বার্তাই পুলিশ কর্মকর্তা এজাহার রূপে গণ্য করে পদক্ষেপ নিবেন (দেখুনঃ ৪৭তম ঢাকা ল রিপোর্টের ৯৪ পৃষ্ঠা)
এজাহারের সাক্ষ্য মূল্যঃ এজাহার হলো মামলার প্রারম্ভিক দলিল। এজাহার যেহেতু কোন অপরাধ সংঘটনের পর পরই দায়ের করা হয়, তাই এজাহার হলো সংঘটিত অপরাধের একটি বাস্তব চিত্র তাছাড়া এজাহারের ওপর ভিত্তি করেই মামলার তদন্ত কাজ প্রাথমিকভাবে পরিচালিত হয়। টি যেকোন মামলার প্রধানতম লিখিত দালিলিক সাক্ষ্য আর এ কারণেই মৌলিক সাক্ষ্য না হয়েও ফৌজদারী মামলায় এজাহারের গুরুত্ব অপরিসীম। এজাহারদাতা এবং এজাহারগ্রহিতার (সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার) মধ্যে অন্তত একজনকে মামলার সাক্ষ্য পর্বে আদালতে এসে সাক্ষ্য দিয়ে তা প্রমাণ করতে হয় অন্যথায় মামলা দুর্বল হয়ে যায়
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১৪৫ ধারানুসারে এজাহারকে সাক্ষীর সাক্ষ্যের সত্যতা কিংবা অসংগতি প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা যা। অধিকন্তু, এজাহারের বক্তব্যের সঙ্গে সাক্ষ্য পর্যায়ে এজাহারকারী/গ্রহিতার বক্তব্যে অসংগতি ধরা পড়লে অপরাধ প্রমান করা কঠিন হয়ে পড়ে। অপরাধের ধরণ ও অপরাধীদের আচরণ এজাহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাহলেও মামলার ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
জিডি ও এজাহারের পার্থক্যঃ জিডি করা হয় অপরাধ সংঘটনের আশংকা থেকে, অপরদিকে এজাহার করতে হয় অপরাধ সংঘটনের পরপর। এজাহার কেবলমাত্র আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রেই দায়ের করা যায়, কিন্তু জিডি যেকোন অপরাধ এমনকি কোন কিছু হারিয়ে গেলেও করা যায়।
শেষ কথাঃ ফৌজদারী মামলার বিচারে এজাহার অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই বিচারকালে এজাহারে কোন ত্রুটি ধরা পড়লে তা আর সাধারণত সংশোধন করা যায়না। এজাহারের ওপর মামলার ভাগ্য অনেকখানি নির্ভর করে। একটি শক্তিশালী এবং নিরেট এজাহার একদিকে যেমন আইনের শত ব্যাখ্যার মধ্যেও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে পারে অন্যদিকে ঠিক তেমনি দুর্বল ও অসঙ্গতিপূর্ণ এজাহার মামলার গুনগত মান নষ্ট করে বিচার বিলম্বিত করে আসামীদের জন্য বেকসুর খালাসের ব্যবস্থা করতে পারে। তাই এজাহার দায়ের করার পূর্বে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি এ বিষয়ে পুলিশের জন্য প্রশিক্ষণ ও বর্তমান প্রক্রিয়াটি সংশোধন করে এজাহারের জন্য জনবান্ধব ছক প্রবর্তন করাও অত্যাবশ্যক। তাহলে অন্তত প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে আর কোন রফিকুল ইসলাম কিংবা সিরাজউদ্দিনকে বিচার বঞ্চিত হয়ে চোখের জল ফেলতে হবে না।
২২-০১-২০১২ তারিখের প্রথম আলোর আইন অধিকার পাতায় প্রকাশি।

Beyond the Gavel: The Twists of Prenatal Sex Detection

  In a recent decision, a divisional bench of the High Court Division (HCD) has imposed embargo on pre-natal sex detection in Bangladesh in ...