Monday, July 8, 2013

সন্ত্রাসবিরোধী আইনঃ আইনের শাসন অবমাননার চূড়ান্ত নিদর্শন



আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নবম জাতীয় সংসদ বিগত ১১ জুন সংসদের চলতি সর্বশেষ বাজেট অধিবেশনে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) বিল, ২০১৩ নামক একটি আইনে কিছু বিতর্কিত সংশোধনী কণ্ঠ ভোটে পাস করে। মজার ব্যাপার হলো এই আইনটি প্রথম ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক সে বছরের ১১ জুন অনুমোদন পেয়েছিল। পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় মহাজোট সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনটি ২০০৯ সালে সংসদের প্রথম অধিবেশনে অনুমোদন দেয় এবং পরবর্তীতে ২০১২ সালে পুনরায় সংশোধন আনে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এ কথা অনস্বীকার্য যে, অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস ও মৌলবাদ দমনে এবং বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটনে যুগোপযোগী সন্ত্রাস দমন আইন প্রণয়ন অত্যাবশ্যক। তথাপি এ ধরণের আইন প্রণয়নের পূর্বে আইন প্রণেতাদের স্মরণ রাখা দরকার যে, এরূপ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে যেন যুগপৎভাবে নাগরিক স্বাধীনতা, মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব এবং সেই সাথে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমনের উদ্দেশ্য উভয়ই সমুন্নত থাকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো বর্তমান আলোচিত আইনটি আইন শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ নিশ্চিহ্নকরণের নামে গ্রেফতার, আটক, নিপীড়ন ও শাস্তি প্রদানের অপরিসীম ক্ষমতা প্রদান করেছে। 

আইনটির বিধান বৈশ্বিক শান্তি নিশ্চিতকরণের নামে এখন নির্বাহী বিভাগ দ্বারা ভিন্নমত প্রকাশকারীদের বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, অধিকারকর্মী, ট্রেড ইউনিয়নকর্মী, সাংবাদিক এবং অন্যান্য আন্দোলনকারীদের আইনগত পন্থায় দমন নিপীড়নের এক নবতর দুয়ার উন্মোচন করেছে। আইনে সংযোজিত বিধানাবলী দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে এ আইনটি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, আইনের শাসনের মৌলিক মতবাদ ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধানের চেতনার পরিপন্থী।  আরও ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো এই অগণতান্ত্রিক সংশোধনীটি জনগণকে অবহিত না করে ও কোনরূপ আলোচনার সুযোগ না দিয়েই তড়িঘড়ি করে এবং অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতীয় সংসদে পাস করা হয়েছে। জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি উল্লিখিত আইনটির সংশোধনীসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আট দিন সময় পেলেও এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় মাত্র একদিন এবং কমিটি তাদের এ সংক্রান্ত রিপোর্ট মাত্র দেড় পৃষ্ঠায় শেষ করে!

সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী বিলে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিস্তৃত ও অস্পষ্ট সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে, যা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এমনকি বৈধ কোন সমাবেশ বা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনেও ভবিষ্যতে ব্যবহার করা হতে পারে বলে আশংকা রয়ে যায়। উল্লিখিত আইনের ৬ ধারানুসারে কোন ব্যক্তি, সত্ত্বা বা প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসীরূপে বিবেচিত হবেন যদি তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোন ব্যক্তিকে খুন, আঘাত, আটক বা অপহরণ করেন বা করার উদ্যোগ নেন অথবা সম্পত্তি বিনষ্ট করেন কিংবা বিস্ফোরক, আগ্নেয়াস্ত্র বা রাসায়নিকের মাধ্যমে দেশের সুনাম, ঐক্য, নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্বের ওপর হুমকি তৈরি করেন বা তৈরি করার উদ্যোগ নেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বলতে বাংলাদেশে নিবন্ধনকৃত বা বাংলাদেশের পতাকা বহনকারী জাহাজ বা উড়োজাহাজও বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড বলে বিবেচিত হবে। এমনকি এ দেশের ভূ-খণ্ড ব্যবহার করে কেউ যদি অন্য কোন রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টের উদ্যোগ গ্রহণ করেন তবে তিনিও সন্ত্রাসী বলে বিবেচিত হবেন। অধিকন্তু আইনটিতে সম্পত্তির পুনঃসংজ্ঞায়ন করা হয়েছে। সম্পত্তি বলতে এ আইনে দেশের বাইরে বা ভেতরে অবস্থিত স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ অথবা সম্পদ বা  নেগসিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট থেকে উৎসারিত লাভকে বোঝানো হবে। আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অপরাধ প্রমাণে ৩ বছর থেকে শুরু করে ২০ বছর পর্যন্ত বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।

সন্ত্রাবাদের এই বিস্তৃত সংজ্ঞায়ন সম্পদকে অন্তর্ভুক্ত করায় বিশৃঙ্খলা বা আঘাত না করেও সন্ত্রাসী হিসেবে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার পথ প্রসারিত করেছে। কিন্তু জাতিসংঘের সন্ত্রাসবাদ দমন ও মানবাধিকার সম্পর্কিত বিশেষ সিদ্ধান নুসারে সন্ত্রাসবাদ বলতে কেবল মৃত্যুর উদ্দেশ্য নিয়ে কাউকে আক্রমণ করা বা প্রতিশোধ নেয়ার নিমিত্তে কাউকে মারাত্মক আঘাত করা বোঝায়, সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধকে অন্তর্ভুক্ত করেনা। উপরন্তু সম্পদ সংক্রান্ত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখাও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। কেননা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডানুসারে কেবলমাত্র মারাত্মক ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রেই মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত প্রদান করা যায়, যে নীতি বাংলাদেশের স্বাক্ষরিত ১৯৬৬ সালের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদের ১৫ অনুচ্ছেদও সমর্থন করে।

সন্ত্রাসের এই ব্যাপক সংজ্ঞা কখনো কখনো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীকেও সন্ত্রাসী বানাতে পারে।  কেবলমাত্র মানব্বন্ধন বা মিছিল পথ অবরোধ করলে বা যান চলাচলে বাঁধা তৈরি করলে আন্দোলনকারীর তিন বছর থেকে শুরু করে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তি ভোগ করা লাগতে পারে। এমনকি যদি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে মনে হয় যে, সে ৬ ধারায় উল্লিখিত কোন কাজ সম্পাদন করার হুমকি তৈরি করতে পারে তবে তাকেও ওই একই শাস্তি ভোগ করতে হতে পারে। আরও অদ্ভুত ব্যাপার হলো সন্ত্রাসদমন আইনানুসারে ভিনদেশী কোন রাষ্ট্রের ক্ষতি করলে বা করতে চাইলে শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড অথচ নিজ দেশের ক্ষতি করলে দণ্ডবিধিনুসারে অপরাধীর সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে গিয়ে ঠেকবে 

সন্ত্রাসদমন আইনের ২১ ধারার বিধানানুসারে, কোনো সন্ত্রাসী ব্যক্তি, সত্তা বা সংগঠনের ফেসবুক, ব্লগ, স্কাইপ, টুইটার, ইমেইল, সামাজিক যোগাযোগের যেকোন মাধ্যম বা ইন্টারনেটের কোনো মাধ্যমে অপরাধসংশ্লিষ্ট আলাপ-আলোচনা ও কথাবার্তা কিংবা অপরাধসংশ্লিষ্ট স্থির বা ভিডিওচিত্র অপরাধের সাক্ষ্য হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আদালতে উপস্থাপন করতে পারবে এবং আদালতে তা গ্রহণযোগ্য হবে

ব্যাপক হারে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামাদি ব্যবহারের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি এ ধরণের ক্ষমতা বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে (যেমনঃ রামুর ঘটনা) পেতে পারে। তবে তা বিচার বিভাগের যথাযথ পূর্বানুমতি সাপেক্ষে সার্বক্ষণিক পূর্ব নজরদারী ব্যতীত হওয়া প্রয়োজন। নতুবা এ ধরণের নজরদারী ও গোয়েন্দাগিরি সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে সংরক্ষিত ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করতে পারে। তাছাড়া এরূপ নজরদারী নাগরিকের স্বাধীন চিন্তা ও মত প্রকাশের অধিকারের অন্তরায়। যা সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদেরও স্পষ্ট লঙ্ঘন। অধিকন্তু এ ধরণের বিধানের সুযোগ ব্যবহার করে কেউ যদি কারো ফেসবুক কিংবা মেইল হ্যাক করে শত্রুতা বশত কাউকে ফাঁসিয়ে দিতে চায়, তবে সে সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায়না। পুলিশের হাতে অপরিসীম এ ক্ষমতা প্রদান জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে হয়রানির নতুন দ্বার উন্মোচন করার নামান্তর মাত্র।

এ ধরণের বিধান দেশের সর্বোচ্চ আইনের ৩৫ অনুচ্ছেদে সংরক্ষিত বিচার পাবার অধিকারেরও পরিপন্থী। তাছাড়া সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন এই নিয়ম প্রচলিত সাক্ষ্য আইনে বিরাজমান বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যুগের সাথে তাল মেলাতে সাক্ষ্য আইনে পরিবর্তন আনা দোষের কিছু নয়। কিন্তু এভাবে সাধারণ আইনকে পাশ কাটিয়ে একটি বিশেষ আইনে সাক্ষ্য আইনের বিধান পরিবর্তন করায় আইনটির অপব্যবহার হওয়া নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক ঘটার অবকাশ থেকে যায়।

সন্ত্রাসনিরোধ আইনের ৪০ ধারা বলছে পুলিশ এখন থেকে এই আইনানুসারে তদন্ত বা কার্যধারা তাৎক্ষনিকভাবে শুরু করতে পারবে। সেক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে কেবল অবহিত করলেই চলবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা বর্তমান আইনের বিধানমতে স্বীকারোক্তিও গ্রহণ করতে পারবেন। এভাবে বিচার বিভাগীয় কাজের মধ্যে নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তাদের ডেকে আনা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অবমাননা এবং ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তাছাড়া বিচারকালীন সময়ে বিচারিক হাকিমদের এখন পুলিশের সুপারিশ মেনে বিচারকার্য পরিচালনা করতে হবে। যেখানে সাংবিধানিক সুরক্ষা সত্ত্বেও এ ভূমির সাধারণ জনগণ প্রায়শই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দ্বারা হয়রানি, বিনা কারণে আটক, গ্রেফতার, নিপীড়ন প্রভৃতির শিকার হয়, সেখানে এ ধরণের সীমাহীন ক্ষমতা প্রদান ভবিষ্যতে কীভাবে ব্যবহৃত হতে পারে সে বিষয়ে চিন্তার খোরাক যোগায়।

আইনটির বর্তমান বিধানানুসারে দোষী সাব্যস্ত হলে সরকার দোষী ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা রাখে (ধারা ৩৪)। আদালতের অনুমতি ব্যতীত এ ধরণের বিধানের সংযোজন জনগণের সম্পত্তি ধারণের মৌলিক (সংবিধানের ৪২ অনুচ্ছেদ) অধিকার হরণের শামিল। সন্ত্রাসদমন (সংশোধন) বিল, ২০১৩ অনুসারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনে যদি যৌক্তিক সন্দেহের উদ্রেক ঘটে যে কোন অর্থ সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত হতে পারে, তবে তা ম্যানুয়াল, ইলেকট্রনিক, ডিজিটাল কিংবা যেভাবেই লেনদেন করা হোক না কেন কেবল মাত্র এই সন্দেহের জোরে কাউকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো যাবেএ ক্ষেত্রে টাকা নগদ পাঠানোর বিষয়টি প্রমাণিত হতে হবে এমনটাও নয়; চেক, মানি অর্ডার, পে-অর্ডার, ডিডি, টিটি, ক্রেডিট কার্ড এমনকি ই-মেইল বার্তায় প্রমাণ পাওয়া গেলে তা এ আইনের আওতায় অর্থ পাচারের অভিযোগে সাক্ষ্য হিসেবে আমলে নেওয়া যাবে (ধারা ২)এই ধারা অনুযায়ী উদ্দেশ্যমূলকভাবে হ্যাক করে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে যে কাউকে অপরাধী বানানোর সুবর্ণ সুযোগ করে দেয়া হয়েছেসংশোধিত আইনে বাংলাদেশ ব্যাংককে এ ধরণের হিসাব আদালতের পূর্বানুমতি ব্যতীত ১৮০ পর্যন্ত জব্দ করে রাখার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, যা এক কথায় নজিরবিহীন এবং নির্বাহী বিভাগের ওপর অসীম ক্ষমতা অর্পণ। বাংলাদেশের মতো একটি রাষ্ট্র, যেখানে প্রায় প্রতি মুহূর্তে আইন লঙ্ঘিত হয়, মানুষ অযথা নির্যাতন-হয়রানির শিকার হয় সেখানে এ ধরণের বিধান সংযোজন কেবল সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকারের পদদলন নয় অধিক্তু সরকারের নির্যাতনের হাতিয়ার ধারালোকরণও বটে।

সন্ত্রাসদমন (সংশোধন) বিল, ২০১৩ এর তফশীলে জাতিসংঘের নয়টি আন্তর্জাতিক সনদ সংযুক্ত করে এগুলোকে দেশীয় আইনের অংশে পরিণত করা হয়েছে। অথচ সনদগুলো কবে কীভাবে সংসদে পাস হলো সে বিষয়ে আমজনতার পাশাপাশি তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণও বোধকরি একই অন্ধকারে নিমজ্জিত। অথচ সংবিধানের ১৪৫ক অনুচ্ছেদ বলছে স্বাক্ষরিত প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক সনদ সংসদে উপস্থাপন করে সে বিষয়ে জাতিকে অবহিত করতে হবে। সংবিধান যেন এ দেশে মাথার ওপর তুলে রাখা এক পবিত্র গ্রন্থের নাম। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো যার দোহায় দিয়ে ফায়দা লোটে আর জনগণের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার জন্য ডুকরে ডুকরে মায়াকাঁদা কাঁদে। ওদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে তাদেরই হাতে ছিনতাই হয় একের পর এক সংবিধানিক অধিকার। এ যেন আইন, মানবাধিকার আর আইনের শাসন গণধর্ষণের মহোৎসব। একপাশে নাগরিকের ঘামের দামে চলা সংসদ নামক ল্যাবরেটরিতে বসে নিত্য নতুন আইন তৈরি করে জনগণের টুঁটি চেপে ধরার আয়োজন করা আর অন্যপাশে কল্যাণের ধুয়ো তুলে ভোটারদের সামনে লোভের মুলো ঝুলিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করায় যেন এদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব

এখন যদি প্রশ্ন করা হয় ক্ষমতাসীন বর্তমান বা ভবিষ্যৎ শাসকেরা এই আইনের অপব্যবহার করবেনা কিংবা এই আইন রাজনৈতিক দমন-নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে না তবে তার নিশ্চয়তা কে দেবে? এ ধরণের আইন কেবল শাসক গোষ্ঠীর নির্যাতনের হাতকেই প্রসারিত করে; জনকল্যাণ, দেশ কিংবা বৈশ্বিক শান্তি নিশ্চিত করতে পারেনা। শাসক গোষ্ঠীর ভুলে গেলে চলবেনা যে, জনগণ দেশের মালিকানা কারো কাছে বিকিয়ে দেয়নি, কেবল দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্য পাঁচ বছরের সময়সীমা দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে মাত্র।  সরকারকে কেবলমাত্র দেশের নিরাপত্তা ও জনস্বার্থ নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, কোন রাষ্ট্র বা সংস্থার স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য ক্ষমতায় বসানো হয়নি। অন্যথা এ মাটির সন্তানেরা খুব ভালো করেই জানে কিভাবে শাসকগোষ্ঠীকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হয় এবং পাঁচ বছরান্তে ক্ষমতার অপব্যবহারের মোক্ষম জবাব দিতে হয়। 

দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার প্রধান উপসম্পাদকীয় হিসেবে সম্পাদকীয় পাতায় (পৃষ্ঠাঃ ৪) ১৩.০৭.২০১৩ তারিখে প্রকাশিত।

No comments:

Post a Comment

The Necessity of Reforming the International Crimes Tribunals Law of Bangladesh for Fair Trial

  The present interim government of Bangladesh has decided to try the former ousted prime minister Sheikh Hasina before the International Cr...